কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটেও রপ্তানি আয়ে সুবাতাস

সংকটেও রপ্তানি আয়ে সুবাতাস

বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে বছরের শুরুতে রেমিট্যান্সের পর রপ্তানি আয়েও সুখবর এলো। জানুয়ারি মাসে দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনেছেন, যা আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি।

দুই মাস ধরে পরপর ৫০০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি আয় আসছে। এর আগে ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে।

ইপিবির গতকাল প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের রপ্তানি আয়ের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক থেকে বাড়তি আয় সামগ্রিক রপ্তানি আয়কে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রেখেছে। এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য থেকেও গত সাত মাসে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, রাসায়নিক পণ্য, রাবার, হস্তশিল্পের পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইলসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতি এক ধরনের মন্দার কবলে। দেশে-দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে কম মূল্যের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে কম দামের পণ্যই তৈরি করে। ফলে মন্দা হলেও পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয়ে ৭ শতাংশের বেশি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দমমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের ছিল ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে তৈরি পোশাকের ওভেন খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭১ কোটি ১২ লাখ ডলার। এই সময়ে ওভেন থেকে আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই সময়ে নিটওয়্যার থেকে আয় ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডলার হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের ছিল ১ হাজার ৩২৭ কোটি ডলার।

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় সম্পর্কে বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, একক মাসের হিসাবে গত দুই মাস ৫০০ কোটি ডলারের বেশি করে রপ্তানি আয় হচ্ছে। এই মন্দার সময়ে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২৩ সালে মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বিশ্ব দুর্বল প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি প্রলম্বিত সময়ের মধ্যে প্রবেশ করছে। বেশিরভাগ কারখানায় নতুন অর্ডারও কমে গেছে। এদিকে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

অন্যন্য খাতের রপ্তানি আয়ের চিত্র : চলতি অর্থবছরের গত ৭ মাসে তৈরি পোশাকের পর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ সময়ে এই খাতের রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৭৩ কোটি ৩১ লাখ ডলারে, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৬৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার। একই সময়ে চামড়ার জুতা রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার থেকে ৪৩ কোটি ১৬ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি আয় ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ২২ কোটি ৪২ লাখ ডলারে অবস্থান করছে। কাপড়ের জুতা রপ্তানিও বেড়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে ৬৯ কোটি ২৮ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের বছর একই সময়ে খাত থেকে আয় ছিল ৮৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার। একইভাবে কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও কমেছে ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। এ খাতে আয় দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার, আগের অর্থবছরে এই সময়ে ছিল ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। হিমায়িত পণ্যের মধ্যে হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছের রপ্তানি আয় কমেছে ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গেল জানুয়ারিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রবাসী আয়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রধান দুটি উৎস। এই দুটি উৎস থেকে আয় বাড়লে চলমান সংকট থেকে উত্তরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিআরটিএর অভিযানে ৪০৬ মামলায় ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা 

জাপার দু’পক্ষের কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা

গাজায় এবার মার্কিন সেনা, তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী সমুদ্রবন্দর

হিটস্ট্রোকে পেপার বিক্রেতার মৃত্যু

শ্রমিকদের ভিসা সহজ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী আহ্বান

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী 

বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার

খেলা দেখা নিয়ে অবাক তথ্য মোস্তাফিজের

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

মিরসরাইয়ে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

১০

বিশ্বজয়ী অধিনায়কের সংগ্রহে ‘১০০০’ ব্যাট

১১

মার্ক জাকারবার্গকে টপকে গেলেন ইলন মাস্ক

১২

থাইল্যান্ডের কাছে চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

১৩

আমার দেখা ভিয়েতনাম

১৪

মানুষের কষ্টে যুবলীগ ঘরে বসে থাকে না: পরশ

১৫

মার্কিন সহায়তায় কি বাঁচবে ইউক্রেন?

১৬

গরমে গরিবের এসি যেন মাটির ঘর

১৭

টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

১৮

বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাকরণে বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

১৯

দলবদলে সরগরম থাকবে বার্সা!

২০
*/ ?>
X