ঝিমিয়ে পড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগ ও ঘোষণায় থেমে থেমে চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলেও ফের দু-এক দিনের মাথায় তা সেই আগের অবস্থাতেই ফিরে আসছে।
এতে করে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ার পর্যায়ক্রমে ফ্লোর প্রাইসে এসে পৌঁছেছে।
গত ১০ এপ্রিল দর হারিয়ে ১৮৮ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছিল। প্রতিদিন এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আর ১৮ এপ্রিল লেনদেন হওয়া ৩১১ কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে। অবস্থান করছিল ১৯২টি কোম্পানি। সবশেষ তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত প্রায় আড়াইশ কোম্পানি এখন ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।
এতে বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ার তুলনায় কমার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে ক্রেতা সংকটে পড়ে লেনদেনের পাশাপাশি কমছে সূচক। এ অবস্থায় ফ্লোর প্রাইসেই আটকে গেছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি।
যদিও বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাজার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়, চলমান ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা তুলে দিলে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। এতে অতিলোভী চক্র লাভবান হবে। তবে বিশ্বপরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তন হলে কমিশন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সারা দেশে সব খাতের মতে পুঁজিবাজারেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাজারে ধস নামে। বাজার সুরক্ষায় সেই সময় (১৯ মার্চ) নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রথম ‘ফ্লোর প্রাইস’ আরোপ করে। এরপর অবশ্য টানা ৬৬ কর্যদিবস সাধারণ ছুটি থাকায় লেনদেন বন্ধ থাকে শেয়ারবাাজরে। পরে মে মাসে লেনদেনে ফেরে পুঁজিবাজার। ওই সময় ভালো যাচ্ছিল শেয়ারবাজার। ফলে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর পরের বছর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনে আবার সংকট দেখা দেয় শেয়ারবাজারে। ধারাবাহিক পতন শুরু হলে ২৮ জুলাই ফের সব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে কমিশন। পরে ডিসেম্বরে ১৬৯ কোম্পানির ওপর থেকে শর্ত প্রত্যাহার করা হলেও চলতি বছর মার্চে ওই সব কোম্পানির ওপর ফের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় কমিশন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতিতে কিছু লোক অতি লাভের জন্য বসে আছে। এ অবস্থায় যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। তাদের তো আমরা সুযোগ করে দিতে পারি না। আমরা চাচ্ছি, এই সময়টাতে যাতে মডারেট লাভ করতে পারে। আর যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন বেশি লাভ করতে পারবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থেই বহাল রাখা হচ্ছে ফ্লোর প্রাইস।