আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইলেকট্রনিকস খাতে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটহার বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেটরের ভ্যাটহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া এয়ারকন্ডিশনে নতুন করে বসছে ভ্যাট। ভ্যাটহার হতে পারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ। সিকিউরিটিজ সার্ভিস সেবা, নিলামকারী, জুস থেকে শুরু করে ১১ থেকে ১২ ধরনের পণ্যে ভ্যাটের অভিন্ন হার করা হচ্ছে ১৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করে ভ্যাট অব্যাহতি দেবে না এনবিআর। অর্থাৎ অব্যাহতি তুলে নেওয়ায় নতুন করে আরোপ হচ্ছে ভ্যাট। এয়ারকন্ডিশনের ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ চলতি অর্থবছরের জুনে শেষ হচ্ছে। আগামী অর্থবছর এয়ারকন্ডিশনের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এয়ারকন্ডিশনের ভ্যাটহার হতে পারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া রেফ্রিজারেটরের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। দেশের ইলেকট্রনিকস খাতের বিকাশে দশ বছরের ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল সরকার। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চলতি অর্থবছরে রেফ্রিজারেটরের ওপর ভ্যাট আরোপ করে এনবিআর।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী কালবেলাকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্সের বড় বাজার হিসেবে গড়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশিরা বাজার দখলের চেষ্টা করবে। তাই আমাদের প্রয়োজন দেশীয় শিল্পকে সক্ষম করে তোলা। একই সঙ্গে সরকারকে ভ্যাটও আদয় করতে হবে। ইলেকট্রনিকস খাতকে সক্ষম করে তুলতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট সুবিধা দিয়ে আসছে। আগামী বাজেটে ইলেকট্রনিকস খাতে ভ্যাটহার বাড়ানো হলে নিশ্চয়ই তা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আগামী অর্থবছর থেকে ভ্যাটের অভিন্ন হার বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে এনবিআর। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ ধরনের পণ্যে ভ্যাটের অভিন্ন হার ১৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখন এসব পণ্যের ভ্যাটহার ১৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আদায় বাড়াতে সিকিউরিটিজ সার্ভিস সেবার বিপরীতে ভ্যাটের হার ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি সার্ভিসেও আগামী অর্থবছর বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে যে কোনো ধরনের নিলামের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা আছে। আগামী অর্থবছর এই হার ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব বাড়লেও নিলাম গ্রহীতার খরচ বাড়বে। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে বৈদ্যুতিক বাল্ব উৎপাদনে ভ্যাটের হার বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে আগামী বাজেটে। বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাল্বের ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ । আগামী অর্থবছর এই হার ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাসায় লাইট জ্বালানোর খরচও আগের তুলনায় বাড়বে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইটের ভ্যাটের হার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী বাজেটে কোমল পানীয়ের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর।
ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী অর্থবছর নতুন করে কোনো ধরনের অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর যেসব খাতে অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে, নতুন করে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া বেশকিছু খাতে অব্যাহতি তুলে নিয়ে ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া ভ্যাটের অভিন্ন হার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কিছু কিছু খাতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে আগামী অর্থবছর। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ২০২২ সালে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক মিলে প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের অন্যতম শর্ত ছিল রাজস্ব আদায় বাড়াতে অব্যাহতি তুলে দিতে হবে। তিন ধাপে ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের রাজস্ব অব্যাহতি তুলে দিতে হবে। এসব কারণে চলতি অর্থবছর থেকে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে যাচ্ছে এনবিআর। গত ১৪ মে বাজেটের বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন এনবিআর কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নতুন করে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিন্ন ভ্যাট হার নিয়ে এনবিআরের প্রস্তাবে সায়ও দিয়েছেন। এরই আলোকে উৎপাদন পর্যায়েও ভ্যাটের হার বাড়াচ্ছে এনবিআর।