বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণ আমদানির শুল্ক অর্ধেক করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটি আমদানি শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে দেশে স্বর্ণ রিফাইনারি শিল্পের বিনিয়োগ ও উৎপাদন উৎসাহিত করতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ এবং টিটিআই ৩১ থেকে কমিয়ে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আংশিক পরিশোধনকারীদের জন্য স্বর্ণ আমদানি শুল্ক ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। আর বিষয়টিকে যৌক্তিক বলছে সংস্থাটি। ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নিজস্ব প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে স্বর্ণ পরিশোধন করা হলে বাংলাদেশে শিল্পায়নের নতুন খাত তৈরি হবে। বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি আহরণসহ দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আসবে। অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক নিজস্ব প্লান্টে পরিশোধন প্রক্রিয়া এখনো বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি। স্বর্ণ পরিশোধন প্লান্ট স্থাপনে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার মতো এসব প্লান্ট স্থাপনকারীর রেয়াতি সুবিধায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে বর্তমানে এই যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে। আগামী বাজেটে এই আমদানি শুল্ক রেয়াতি সুবিধা হিসেবে ১ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের মোবাইল ফোনে কল করলেও তার সাড়া মেলেনি। পরে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বর্ণ পরিশোধন শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনে এইচএস কোড পরিবর্তন করারও পরামর্শ দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এ ছাড়া রেয়াতি সুবিধা দিতে ২০২২ সালের এসআরও সুবিধায় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বলেও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সংস্থাটি। আর শুল্ক-করের ক্ষেত্রে অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি টিটিআইও ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করারও সুপারিশ করেছে কমিশন। মূলত বাজুসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেটে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে এনবিআরের কাছে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণালংকার প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে সুবিধার প্রস্তাব করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের কাছে সুপারিশ করেছে কমিশন। আর কিছু কিছু জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন থাকলেও বেশিরভাগ জুয়েলারি শোরুমে নেই। তাই সব নিবন্ধিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি স্থাপন করলে ভ্যাট আহরণ আরও বাড়বে বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন। তাই দ্রুত সব জুয়েলারিতে দ্রুত ইএফডি বসানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া নিজস্ব প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন শুরু করার আগে শিশু শিল্প হিসেবে স্বর্ণ শিল্পকে আমদানি সুবিধা দেওয়ার পক্ষে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বর্ণের আমদানি শুল্কের যৌক্তিক হার নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।