আইন অনুযায়ী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্যহারে শুল্ক-কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এর তোয়াক্কা করছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, পেট্রোবাংলা নিয়মিত এলএনজি আমদানি করে এলেও ২০২১ সাল থেকে পণ্যটির আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কর পরিশোধে গড়িমসি দেখাচ্ছে। ফলে সংস্থাটির কাছে দিনদিন বাড়ছে বকেয়া শুল্ক-করের পরিমাণ। সবশেষ হিসাবে পেট্রোবাংলার ৩৭টি আইজিএম এবং ১৫৯টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে বকেয়া শুল্ক-করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ১৪ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এই বকেয়া শুল্ক-কর আদায়ে নিয়মিত বিরতিতে তাগাদা দিয়ে আসছে। এজন্য পেট্রোবাংলাকে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও এতে বকেয়া আদায়ের কোনো অগ্রগতি মিলছে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক ফের পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বরাবর অনুরূপ একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই বিপুল পরিমাণ অনাদায়ি বকেয়ার কারণে একদিকে যেমন দেশের সামগ্রিক ট্যাক্স জিডিপি রেশিওতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওপর ধার্য করা বকেয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পণ্য চালান খালাসের ক্ষেত্রে শুল্ক-কর পরিশোধের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকার বকেয়া পড়ে আছে। এটা আইনের ব্যত্যয়। সবচেয়ে বড় বিষয়, শুল্ক-কর পরিশোধ না করার কারণে ট্যাক্স জিডিপি রেশিওতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের দুটি বিএল অব এন্ট্রির বিপরীতে শুল্ক বকেয়া ছিল ১২৭ কোটি টাকা। পরবর্তী মাসে অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১৪টি বিল অব এন্ট্রির শুল্ক বকেয়া ছিল ৭৫৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি এলএনজি চালানের শুল্ক বকেয়া রয়েছে ৯৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
একই বছরের মার্চের পাঁচটি পণ্য চালানের বিপরীতে শুল্ক বকেয়া রয়েছে ২৩২ কোটি ৮১ লাখ টাকা, মে মাসের ১০টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৪৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, জুনের ১৫টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া জুলাইয়ের একটি চালানের ৪৭ কোটি ৩ লাখ টাকা, আগস্টের ১০টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৭৭১ কোটি ১ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ১৪টি এলএনজি চালানের বিপরীতে শুল্ক বকেয়া রয়েছে ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এলএনজির ১৫টি চালানের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে সাতটি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৫১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, মার্চে তিনটি চালানের বিপরীতে বকেয়া ২০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এপ্রিলে একটি চালানের বিপরীতে ৬৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর মে মাসে সাতটি পণ্য চালানের বিপরীতে বকেয়া দাঁড়ায় ৪৬৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা জুলাইয়ের ৯টি চালানের বিপরীতে বকেয়া যোগ হয় ৫৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সেপ্টেম্বরে ৪টি চালানের
বিপরীতে বকেয়া ৩১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ১০টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৬৯১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৯টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৫৮৩ কোটি টাকা এবং
ডিসেম্বরের ১৩টি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৮৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একটি এলএনজি চালানের বিপরীতে বকেয়া ৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি চালানের বিপরীতে বকেয়ার পরিমাণ ৪২৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ৩৭টি আইজিএমের বিপরীতে শুল্ক কর বকেয়ার পরিমাণ দাড়িয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা।