মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৩ এএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়তি সুদহারেও গতি নেই আমানতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
বাড়তি সুদহারেও গতি নেই আমানতে

দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংক আমানতও বাড়ে—এটি স্বাভাবিক চিত্র হলেও দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যত্যয় ঘটছে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির দাপটে ব্যাংকের আমানত বাড়ছে না। সম্প্রতি ঋণের সুদহার বাড়ায় আমানতের সুদহারও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বাড়ছে না ব্যাংকের আমানত। ব্যাংকগুলোর চলতি আমানত কিছুটা বাড়লেও মেয়াদি আমানত বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭ কোটি টাকা, যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের আমানত কমেছে ৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আমানত প্রবাহ কমে যাওয়ায় তারল্য সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। ফলে ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে নিজেদের বিনিয়োগ কমিয়ে এনেছে। যেসব বিল-বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলো নবায়ন করেনি। আবার মেয়াদ পূর্ণ হয়নি—এমন অনেক বিল-বন্ডও ব্যাংকগুলো নগদায়ন করে ফেলছে। সেই সঙ্গে ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অব্যাহতভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় দেশের ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেকে ব্যাংকে থাকা নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছেন। এ ছাড়া বর্তমানে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণেও ব্যাংকের আমানত কমে গেছে। জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষের হাতে সঞ্চয় থাকছে না। ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়ার পেছনে এটিরও ভূমিকা রয়েছে।

জানা গেছে, মেয়াদি আমানত হলো দেশের ব্যাংকগুলোর তহবিল সংগ্রহের প্রধান উৎস। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৮৮ শতাংশই মেয়াদি। গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত এ অর্থ থেকেই ঋণ বিতরণ করা হয়। গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা ডিমান্ড বা তলবি আমানত। বাকি ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বিভিন্ন মেয়াদের। এ ধরনের আমানতের সর্বনিম্ন মেয়াদ তিন মাস। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মেয়াদি আমানতের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও তলবি আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে মেয়াদি আমানতের পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বাড়লেও কমে গেছে তলবি আমানতের পরিমাণ। এ সময় ব্যাংকগুলোর তলবি আমানতের পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে থাকা আমানতকে তলবি শ্রেণিতে রাখা হয়।

সামগ্রিকভাবে আমানত প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য গত দুই বছর একদমই ভালো যায়নি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসেবে এক বছরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৭৯ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে আমানত বেড়েছে, ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। যদিও আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে তিনগুণ বেশি হারে।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকই আমানতের সুদহার বাড়াচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সুদহারও দিচ্ছে। এরপরও কাঙ্ক্ষিত আমানত পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০২২ সাল বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি বিভিন্নমুখী সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে, যা ২০২৩ সালেও বহাল ছিল। সংকটগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের ওপরও। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রা চলে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ ছাড়া নেতিবাচক বিভিন্ন সংবাদের কারণে কিছু গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের হাতে সঞ্চয় করার মতো অর্থ থাকছে না। সব মিলিয়ে ব্যাংকে আমানত কিছুটা কমে গেছে। তবে বর্তমানে টাকা ডলার সোয়াপ পদ্ধতি চালু হওয়ায় এবং আমানতের সুদহার বাড়ায় ব্যাংকের আমানত ধীরে ধীরে বাড়ছে। আশা করি, আগামীতে তা আরও বাড়বে।

গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থের সুরক্ষা দিতে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৩ শতাংশ বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হয়। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এসএলআরের হার সাড়ে ৫ শতাংশ। এটি সংরক্ষণ করতে হয় সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কেনার মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করে সুকুকসহ ইসলামী বন্ডে। নগদ তারল্য বেশি হলে ব্যাংকগুলো এসএলআরের নির্দিষ্ট হারের চেয়েও বেশি অর্থ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে।

আর্থিক খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবরে আতঙ্কিত অনেক গ্রাহক গত বছর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। বিদায়ী বছরে ব্যাংকের বাইরে সর্বোচ্চ পরিমাণে নগদ অর্থ ধরে রেখেছে গ্রাহক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিবি কার্যালয়ে আয়নাঘর থাকবে না

টাইগারদের বিপক্ষে কেমন হবে ভারতের একাদশ?

শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হচ্ছে

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

ইয়েমেনের ১৫ নিশানায় মার্কিন হামলা

‘বিরল’ এক সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজীপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে বিএনপি : আজাদ

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চাল নিয়ে লাপাত্তা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

১০

সাতক্ষীরায় ৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ৪২০ শিক্ষক

১১

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

১২

গাজীপুরে শান্তিপূর্ণভাবে চলছে পোশাক কারখানার উৎপাদন

১৩

বৃষ্টি আর কত দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৪

ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়া-লেবানন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

১৫

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১৬

আরেক দেশ থেকে ইসরায়েলে হামলায় ২ সেনা নিহত, আহত ২৪

১৭

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবির স্লোগান ‘বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান’

১৮

শিক্ষক দিবসে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে

১৯

হত্যা মামলায় রসিকের সাবেক কাউন্সিলর মিলন গ্রেপ্তার

২০
X