চা উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে উত্তরাঞ্চলের সমতলভূমির জেলা পঞ্চগড়সহ ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট এবং দিনাজপুর।
এর মাধ্যমে দেশের এই পাঁচ জেলা টানা তৃতীয়বার চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান দখলে রেখেছে। চলতি মৌসুম শেষে (২০২৩) এসব জেলার সমতলভূমিতে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলনের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। গত ২০২২ মৌসুমে চা উৎপাদন হয় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬৮ কেজি।
এই হিসাবে ২০২২ সালের চেয়ে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার কেজি বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর আগের বছর (২০২১) মৌসুমে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলনের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়, যা বাংলাদেশে জাতীয় উৎপাদনের ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে চলতি মৌসুমে বেড়েছে চায়ের আবাদ। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলায় চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২৬৭.২ একর জমিতে, ঠাকুরগাঁওয়ে চা চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৫৭.২৯ একর, লালমনিরহাটে হয়েছে ২৪৮.০২ একর জমিতে, দিনাজপুরে চা চাষ হয়েছে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০.৫৯ একর।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সারা দেশে মোট ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ কেজি চা (মেড টি বা তৈরি চা) উৎপাদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে পঞ্চগড় সফরে এসে সমতলভূমিতে চা চাষের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে সমতলভূমিতে শুরু হয় চা চাষ। সফলতা পাওয়ায় ২০০০ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রথম চায়ের বাগান গড়ে তোলা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এসে বাংলাদেশ চা বোর্ড ‘নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্প’ হাতে নেয়। উত্তরাঞ্চলে চায়ের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নেওয়া এ প্রকল্প ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চলে।
এ ছাড়া ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা চাষ শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের এই পাঁচ জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ২০টি বড় চা-বাগান রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৬৪টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ২০৭টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র আয়তনের চা-বাগান ২৫ একরের আছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের চা চাষের পরিধি ও উৎপাদন বিবেচনায় গত বছরের ২০২৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র চালু হয়েছে অনলাইনভিত্তিক, যেখানে এ পর্যন্ত মোট ৯টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, ‘পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সমতল ভূমি চা চাষের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সেজন্য তারা চাষিদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এতে দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্তত ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড় বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের সমতলভূমিতে ২০১৭ সালে ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। আর সবশেষ ২০২৩ সালে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা।
উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৫৮টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৭টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা চালু রয়েছে। এই কারখানাগুলো চা চাষিদের কাছ থেকে সবুজ চা পাতা কিনে তা থেকে চা তৈরি করে। এর আগে এসব উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিকদের। তবে গত বছর অনলাইনভিত্তিক নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় উৎপাদিত চা এখন পঞ্চগড়েই বিক্রির সুযোগ তৈরি হয়েছে।