মোংলা, পায়রা ও বাংলাদেশ স্থলবন্দরের মতো পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে। এরই মধ্যে হয়েছে আইনের একটি খসড়া, যা নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে খসড়া আইনটি পাস হলেই দেশের ষষ্ঠ সমুদ্রবন্দর হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ী। এতে গতি বাড়বে পণ্য খালাসে, কমবে দুর্ভোগের পাশাপাশি সময়ও। কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার মানুষের, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে এরই মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে সেখানে আর করতে হবে না অর্থায়ন। এরই মধ্যে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, তা মাতারবাড়ী বন্দরের কাছে ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গত ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন করতে গিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে আলাদা কর্তৃপক্ষ করার চিন্তাভাবনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর যাতে সম্পূর্ণরূপে ডিপ সি পোর্ট হয় সেই পদক্ষেপ নেব। এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে হলেও এটাকে আমরা আলাদা একটা আইন করে, আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দেব।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আলাদা আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেয়। খসড়া আইন হওয়ার পর তা পর্যালোচনার জন্য গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর এটি কেবিনেটে উঠবে। এরপর সংসদীয় উপকমিটিতে আলোচনা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করার পর এটি সংসদে তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে এটি আইন হিসেবে গণ্য হবে। এরপর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চবক ও বাস্থবক) মুন্সি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আলাদা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত হলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।
বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ষষ্ঠ কর্তৃপক্ষ হিসেবে মাতারবাড়ী গভীর বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন হতে যাচ্ছে।
এদিকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে এরই মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। নতুন কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আর অর্থায়ন করতে হবে না। যে টাকা ব্যয় হয়েছে, সেটি মাতারবাড়ী বন্দরের কাছে ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে কমে আসবে পরিচালন ব্যয় ও সময়। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি গঠিত হলে নতুন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বন্দর উন্নয়ন কাজ শুরুর টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে আলাদা কর্তৃপক্ষ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এটি একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর আলাদা কর্তৃপক্ষ হলে সেখানে কাজের গতি অনেক বাড়বে। বন্দরের কার্যক্রম অনেক সহজ হবে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। আলাদা কর্তৃপক্ষ হলেও বহির্বিশ্বে এটিও ব্র্যান্ডিং হবে।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন। কালবেলাকে তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতেই পৃথক সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ গঠন হলে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ কমবে অনেকাংশেই। কারণ পণ্য খালাসের সিদ্ধান্ত মাতারবাড়ী থেকেই নেওয়া যাবে। এতে পণ্য খালাসের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে সময়ও। নতুন করে সৃষ্টি হবে হাজার হাজার কর্মসংস্থান।
তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ী আমাদের একটি মেগা প্রজেক্ট। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে এ সমুদ্রবন্দরকে যুক্ত করে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলেই সাফল্য পাওয়া যাবে। তবে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের আগেই মাতারবাড়ীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে জটিলতা দেখা দেবে।