অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের আইডির অপব্যবহার করে মালপত্র খালাস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাসওয়ার্ড জালিয়াতির হোতারা বরাবরই থেকে যান অধরা। অসাধু একটি সিন্ডিকেট তিনটি নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে আমদানি পণ্যও খালাস করে নিচ্ছেন। কিন্তু আইডি-পাসওয়ার্ড চুরির মাধ্যমে জালিয়াতি হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সেরেছে এনবিআর। আর যেসব কর্মকর্তার আইডি-পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে মদ-সিগারেট খালাস করা হয়েছে, তাদেরও কোনো ধরনের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। তদন্তে বাইরের যারা চিহ্নিত হয়েছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবুও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে শতকোটি টাকার মদের কনটেইনার খালাস হয়। পরে শুল্ক গোয়েন্দা ও র্যাবের সহায়তায় সেগুলো নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক হয়। পরে দেশজুড়ে আলোচিত ওই ঘটনায় তদন্তে নামে এনবিআর। কিন্তু নিরাপত্তা ঘাটতির পরও কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো যার আইডি-পাসওয়ার্ড থেকে এ ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, তাকে পরবর্তী সময়ে কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি দেন তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান। এ ছাড়া অ্যাসাইকুডার নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে জালিয়াতির ঘটনায় সিস্টেমে ত্রুটির তথ্যটি সামনেই আনা হয়নি। পরে একই ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। সেখানের এক কর্মকর্তার অগোচরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের আইডি ব্যবহার করে গত ২০ মে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে এক কনটেইনার সিগারেট খালাস করে অসাধু চক্র। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর এক কর্মকর্তার অবর্তমানে তার কম্পিউটার থেকে আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে তা ব্যবহারের মাধ্যমে মালপত্র খালাস করা হয়েছে বলে দাবি করে এনবিআর। কিন্তু নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। আর একজনের কর্মকর্তার আইডি-পাসওয়ার্ড কেন অন্যের কাছে যাবে, সেই বিষয়েও কোনো জবাবদিহি করেননি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া প্রাথমিক তদন্তে এনবিআরের বাইরে যে সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সে বিষয়েও কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে এনবিআরের শুল্ক নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হোসেন আহমদ কালবেলাকে বলেন, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। আগে যাদের আইডি-পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, অসাধু চক্র চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। এনবিআরের একজন সদস্যকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের সাইবার ইউনিট থেকে শুরু করে কম্পিউটার কাউন্সিলের সহযোগিতা নেওয়া হবে। চক্র চিহ্নিত হওয়ার পরও আইনের আওতায় আনতে না পারার বিষয়ে তিনি জানান, পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়নি।
এনবিআরের পক্ষ থেকে শুধু নতুন করে অ্যাসাইকুডা ব্যবহার করা কম্পিউটারে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সবই আগেও ছিল। এর মধ্যেও সিস্টেমের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সিগারেটের চালান খালাসের চেষ্টা হয়েছে। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে এ ধরনের নির্দেশনা কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খোদ এনবিআর কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন কাস্টম হাউসে কাজ করা শুল্ক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, চুরি হয়েছে বলে এনবিআর দায় সারছে। এ কারণে তিন ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে আইডি হ্যাকের কথা না বলে চুরি হয়েছে বলে দায়মুক্তির চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উদ্ভাবিত অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড নামের বিশ্বস্ত ও নিরাপদ সিস্টেমটি ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের কাস্টমসসহ বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ ব্যবহার করছে।