দেশে বীমা খাতের অতি পরিচিত একটি কোম্পানি হলো সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। বীমা খাতের এজেন্ট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতের হিসাবে ভ্যাট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের নিবন্ধিত হিসেবে এতদিন নিয়মিত ভ্যাট দিয়ে আসছে। তবে অভিযোগ উঠেছে নিয়মিত ভ্যাট দেওয়ার আড়ালে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কৌশলে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক নিরীক্ষায় এমন তথ্যই ওঠে এসেছে। এতে এই বীমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সরকারের ৫৪ লাখ টাকা ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যদিও প্রমাণিত হওয়ার পর ফাঁকির টাকা পরিশোধ করেছে, তবে এখনো সুদের টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।
সূত্র জানায়, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এ অনিয়ম ধরা পড়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নিরীক্ষায়। পরে ভ্যাট ফাঁকির অর্থ আদায় করতে উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠায় ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. নেয়াজুর রহমান এই বিচারাদেশ দিয়েছেন।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বনানীর বিটিএ টাওয়ারে অবস্থিত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দুই বছরে ৫০ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে এলেও কোম্পানিটিকে ছাড় দিয়ে আসছিল উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট। আর এই ভ্যাট পরিশোধ না করার জন্য দুই শতাংশ হারে জরিমানার বিধান রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিলে উদ্ঘাটন থেকে পরিশোধের দিন পর্যন্ত ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ২ শতাংশ হারে ২০২৩ সালের আদেশ জারি হওয়া পর্যন্ত সুদ আরোপ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮০১ টাকা। আর সব মিলে ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩২ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে ভ্যাটের বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোম্পানির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব রফিক কালবেলাকে বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ভ্যাট প্রদানে কিছুটা গ্যাপ হয়। তবে এটা অবশ্যই ফাঁকি নয়। কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা আগের অফিসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের গ্রামীণ এলাকায় কোনো অফিস ক্যাশ টাকায় কিছু স্টেশনারি পণ্য কিনলে, পরবর্তী বছরের হিসেবে যোগ হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা গ্যাপ তৈরি হতে পারে। আর সানলাইফের ভ্যাটের বিষয়টি আগামী সপ্তাহে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদন তথ্যমতে, মূল ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে সানলাইফের সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আর সুদ-সংক্রান্ত ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুকূলে জমা দিয়েছে। আরও সুদ বকেয়া রয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কমিশনারের বিচারাদেশে বলা হয়েছে, সুদ ব্যতীত সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি ৫০ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। আর সুদের টাকা আদায়যোগ্য বলেও বিচারাদেশ দিয়েছে উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট। তবে এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিষ্ঠানটি আপিল করতে পারবে বলেও এই চিঠিতে বলা হয়েছে।