শেখ আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উৎপাদন, কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক

উৎপাদন, কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ার মতো ঘটনায় সামগ্রিক অর্থনীতি নানা ধরনের অভিঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও জনসাধারণকে বারবার সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী দিনের খারাপ পরিস্থিতির জন্য সতর্কও করা হচ্ছে। এ রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে নিয়ে কাজ করে চলেছে ক্ষুদ্র ঋণের পাইওনিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, ব্যাংকের কার্যক্রম, কোটি গ্রাহকের চাহিদা ও সঞ্চয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দৈনিক কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুর রহিম খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ আবদুল্লাহ

কালবেলা : করোনার অভিঘাত, মূল্যস্ফীতির চাপ ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসার মতো পরিস্থিতি যাচ্ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এ রকম অবস্থায় ক্ষুদ্র ঋণ পরিস্থিতি কেমন যাচ্ছে?

আবদুর রহিম খান : ক্ষুদ্র ঋণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অনেক মানুষই নতুন করে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সদস্য হচ্ছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকে নতুন সদস্য এসেছে প্রায় ৮ লাখ। বর্তমানে ১ কোটির বেশি সদস্য রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের। ঋণ বিতরণও বেড়েছে। সদস্যদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক নতুন ধরনের ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। ‘বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ’ নামে এ নতুন ঋণ নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহও দেখা যাচ্ছে।

কালবেলা : অর্থনীতির এ সংকটময় সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য কি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?

আবদুর রহিম খান : আমরা সব ধরনের অর্থায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাতে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। বাজারে সরবরাহ বাড়ে এবং চাহিদা বৃদ্ধি পায়। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানো, শিক্ষার প্রসারে বৃত্তি দেওয়া, নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ, ভিক্ষুকদের বিনা সুদে ঋণ বিতরণ, নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা হচ্ছে।

কালবেলা : নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনারা কী ধরনের সেবা দিচ্ছেন?

আবদুর রহিম খান : শিক্ষিত বেকারদের উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড়াতে গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি রয়েছে আমাদের। যে ব্যক্তি যে ধরনের কাজে দক্ষ, সে কাজের জন্যই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঋণে জামানত নেওয়া হয় না। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৭ নবীন উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। মোট ঋণের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

কালবেলা : ‘বিশেষ ঋণ’কে নতুন ধরনের ঋণ কেন বলছেন? কী পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা এ ঋণ চালু করলেন?

আবদুর রহিম খান : এ ঋণের বৈশিষ্ট্য গ্রামীণ ব্যাংকের অন্য ঋণ কর্মসূচির তুলনায় ভিন্ন। গ্রামীণ ব্যাংকের সব ঋণের কিস্তি সাপ্তাহিকভাবে পরিশোধ করতে হয়। বিশেষ ঋণই একমাত্র ঋণ, যার কিস্তি মাসিকভাবে পরিশোধ করার সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এ বছরের শুরুতে এ ঋণ কর্মসূচিটি চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ ধরনের কাজে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে শুরু হচ্ছে এ ঋণ।

কালবেলা : আপনি বলছিলেন ঋণ চাহিদা বেড়েছে। কী কারণে ক্ষুদ্র ঋণের চাহিদা বেড়েছে বলে মনে করছেন?

আবদুর রহিম খান : ঋণ চাহিদা বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রথমত, মানুষের মধ্যে ব্যবসা বা নিজস্ব উদ্যোগ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পুঁজির চাহিদা। এ ছাড়া পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন কোনো উদ্যোগই স্বল্প পুঁজিতে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গ্রামীণ ব্যাংক গবাদি পশু পালন, বাড়ি বানানো, শিক্ষা, শস্য ঋণসহ বিভিন্ন খাতে ১৫ ধরনের ঋণ বিতরণ করে। পশুর মূল্য, নির্মাণ উপকরণের মূল্য, শিক্ষা ব্যয়, চাষাবাদ খরচসহ সামগ্রিক জীবনযাপন ব্যয় বেড়েছে। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ চাহিদাও বেড়েছে।

কালবেলা : গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বশেষ ঋণ বিতরণ ও আদায় পরিস্থিতি কেমন?

আবদুর রহিম খান : গত অক্টোবর মাসে ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রতি মাসেই ঋণের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আদায় পরিস্থিতিও ভালো। অক্টোবর মাসেই আদায় হয়েছে ১ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা।

কালবেলা : গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকদের সঞ্চয় পরিস্থিতি কেমন?

আবদুর রহিম খান : গ্রামীণ ব্যাংক সবসময়ই গ্রাহকদের পাশে রয়েছে। দরিদ্র মানুষকে সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনই গ্রামীণ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য। এজন্য গ্রাহকদের অর্থায়নের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সঞ্চয়ী মানসিকতা সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহকদের সঞ্চয় স্থিতি রয়েছে ১৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা। গ্রাহকদের সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কিম নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জিপিএস, পারিবারিক সঞ্চয়, মেয়াদি আমানতে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কালবেলা : আপনি বলছেন বাড়তি ঋণ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সদস্যদের ব্যাপক পরিমাণে সঞ্চয় রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকের কার্যক্রম কেমন চলছে?

আবদুর রহিম খান : এ বছরই গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাসে প্রথমবার সব জোনে লাভ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ব্যাংকের ২ হাজার ৫২৮টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৯৬টি শাখা লাভে রয়েছে। মাত্র ৩২টি শাখায় লোকসান রয়েছে। অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এসব শাখায় লোকসান হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, বছর শেষে সব শাখায় লাভ দেখা যাবে। শুধু ব্যাংকের লাভ নয়, আদায়সহ অন্যান্য সূচকে এগিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক।

কালবেলা : কীভাবে এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে?

আবদুর রহিম খান : এর অন্যতম কারণ, ব্যাংকের কর্মীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছেন। সব পর্যায়ের কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে পদ্ধতিগতভাবে। ফলে কর্মীরা বুঝেছেন ভালো কাজ যে করবে, পদোন্নতিসহ অন্য সুবিধা তিনি স্বাভাবিকভাবেই পাবেন। এ ছাড়া নতুন সদস্য সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন সদস্যদের ঋণ ও সঞ্চয় উভয়ই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

কালবেলা : তপশিলি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আবার আদায়ও কমেছে। আপনার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি কেমন?

আবদুর রহিম খান : গ্রামীণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। আদায় বৃদ্ধির কারণেই খেলাপি ঋণ কমেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা আরেকটু বেড়ে ৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকা হয়। তবে এ বছর খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট খেলাপি ঋণ কমেছে। গত অক্টোবর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। আশা করা যায়, খেলাপি ঋণ কমার ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

কালবেলা : চলতি বছর গ্রামীণ ব্যাংক কেমন মুনাফা করবে বলে আশা করছেন?

আবদুর রহিম খান : গত জুন পর্যন্ত কর পূর্ব মুনাফা হয়েছে ১৭২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কর পরিশোধের পর ১০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে আশা করা হচ্ছে নিট মুনাফা পৌনে ৩০০ কোটি টাকা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কিশোর বিজ্ঞানী তারিফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে মারধর

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু

বুধবার বন্ধ রাজধানীর যেসব মার্কেট

কী বলছে রাশিফল, দিনটি কেমন যাবে?

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

আজকের নামাজের সময়সূচি

কালবৈশাখীর ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, খুঁটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ

বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রস্তুত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি

পিএসজিকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ডর্টমুন্ড

১০

নিখোঁজ শ্রমিকের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

১১

মাটির নিচে পাওয়া গেল মদ তৈরির উপকরণ

১২

আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় নিহত ৩

১৩

কুবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও দাবি-দাওয়া নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি

১৪

২৪ ঘণ্টায়ও সন্ধান মেলেনি নদীতে নিখোঁজ শিশুর

১৫

রেলসেতুতে নাটবল্টুর পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে গাছের ডাল

১৬

খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস 

১৭

বাজার করতে গিয়ে দোকানির হাতে মারধরের শিকার চবি শিক্ষার্থী

১৮

২৪ ঘণ্টা পেরুলেও মিরসরাইয়ের অনেক এলাকায় আসেনি বিদ্যুৎ

১৯

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট আজ

২০
X