ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ সাত মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ শুরুর এক মাসের মাথায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাত দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও আর কোনো চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে থাকার পর গত সপ্তাহে আলোচনায় নতুন গতি আসে। একপর্যায়ে মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজিও হয় হামাস। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি রাজি হলেও ইসরায়েলের টালবাহানায় শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তি ছাড়াই এবারের কায়রো আলোচনা শেষ হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
গত মঙ্গলবার থেকে কায়রোতে হামাস, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের প্রতিনিধিদল বৈঠক করছে। মিসরের রাজধানীতে এই আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি। দুটি মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত এল-রিশেক বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের অনুমোদনের বিষয়ে আবারও আশ্বস্ত করে হামাসের প্রতিনিধিদল কায়রো ত্যাগ করেছে। এই প্রস্তাবে গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তবে বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে একজন সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে কায়রোতে পরোক্ষ আলোচনার সর্বশেষ দফা শেষ হয়েছে। এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফা এবং গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরায়েল।
নতুন যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে হামাসের প্রস্তাব নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তেল আবিব নিজেদের আপত্তি জমা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত সোমবার (৬ মে) হামাসের একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা মিসর ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রতিরোধ সংগঠনটি জানায়, হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া কাতারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি এবং মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান আব্বাস কামেলের সঙ্গে এক ফোনালাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা জানান।
হামাসের এমন বার্তার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েলের সব দাবি পূরণ করেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে তা মিসরীয় প্রস্তাবের কাটছাঁট। তবে এতে এমন বিষয়ও রয়েছে যাতে ইসরায়েল রাজি হবে না।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন।
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
মন্তব্য করুন