কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা, যেখানে এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত; কিন্তু সেটা এখন এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে।
এই এলাকার ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের অনুপস্থিতিতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয়, অনেক ব্যবসায়ী বলতে বাধ্য হচ্ছেন—‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়।’
প্রসঙ্গত, কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট, হগ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড এবং কেওয়াইডি স্ট্রিটের মতো এলাকার ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোতে এখন কোনো প্রাণ নেই। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, শপ—সব কিছুই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, আর ব্যবসায়ীরা তাদের বিক্রি পুরোপুরি শূন্য হয়ে যাওয়ায় ঋণে ডুবে যাচ্ছেন।
এই এলাকায় গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছিল একটি বিশেষ ব্যবস্থা—বাংলাদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং সেবা—যা এখন একেবারে মরে যাচ্ছে।
দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, আমরা একেবারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছি। বাংলাদেশি পর্যটকরা না এলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। তাদের উপস্থিতি ছিল আমাদের ব্যবসার একমাত্র জীবিত প্রাণ। এখন তারা আসছেন না, আর আমরা ভীষণ আর্থিক সংকটে পড়েছি।
বাংলাদেশি পর্যটকদের নির্ভর করে গড়ে ওঠা হোটেল মালিক পিন্টু বসাক বলেন, দুই দশক ধরে এই এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য সব কিছু সাজিয়ে রেখেছি—হোটেল রুম, খাবারের রেস্টুরেন্ট, দর্শনীয় স্থান—সব কিছু। কিন্তু এখন তারা আর আসছেন না। আমাদের হোটেল রুম ভাড়া ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে গেছে এবং আমরা আর্থিকভাবে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।
আবেগতাড়িত হয়ে মার্কুইস স্ট্রিটের রেস্টুরেন্ট মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, এটি শুধু একটি ব্যবসা ছিল না, এটি দুই দেশের সম্পর্কের একটি প্রতীক ছিল। আজ যখন বাংলাদেশি পর্যটকরা আর আসছেন না, তখন আমাদের মনে হচ্ছে, এই সম্পর্কের প্রতীকও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা যতটুকু চেষ্টা করছি, ততটুকু ভাঙনের হাত থেকে এই এলাকায় বাঁচানো যাচ্ছে না।
কলকাতার ব্যবসায়ীরা এক ভয়াবহ অবস্থা মুখোমুখি হয়েছেন। হোটেল রুম ভাড়া কমে গেছে, দোকান-পাটে ক্রেতা নেই, রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি খাবারের অর্ডার নেই—যে ব্যবসা এক সময় ছিল লাভজনক, তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। তাদের আর্থিক সঙ্কট এতটা গভীর হয়ে উঠেছে যে, অনেকের পক্ষে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) একটি জরুরি বৈঠক করেছেন, যেখানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
অনুষ্ঠানে তাদের একমাত্র লক্ষ্য—বাংলাদেশি পর্যটকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা, যাতে তারা কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়।
তবে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কা এখনো কাটেনি। তারা জানেন না, এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এবং তাদের টিকে থাকার জন্য কত দিন লড়াই করতে হবে। কলকাতার 'মিনি বাংলাদেশ' এলাকা এখন এক কঠিন সময় পার করছে এবং যদি অবস্থা দ্রুত না বদলায়, তাহলে অনেক ব্যবসায়ী হয়তো তাদের জীবিকা হারিয়ে ফেলবেন।
মন্তব্য করুন