ভারতের দুই রাজ্য মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
অনুষ্ঠিত সেই ফলাফলে দেখা গেছে, মহারাষ্ট্রে বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সই (এনডিএ) ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আর ঝাড়খণ্ডে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও স্থানীয় ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার জোট ইন্ডিয়াই।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে এ দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দেখা গেছে, মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনের বিধানসভায় বিজেপির এনডিএ জোট ২১৬টি আসন পেয়েছে। বিপরীতে বিরোধী জোট এমভিএ বা মহা বিকাশ আঘাদি পেয়েছে মাত্র ৬২টি আসন।
মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনের বিধানসভায় অন্যান্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। এই নির্বাচনে মহা বিকাশ আঘাদি জোট বিগত নির্বাচনের চেয়েও খারাপ ফল করেছে। ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন এই জোট পেয়েছিল ৭২টি আসন। অর্থাৎ, এবারে ১০টি আসন কম পেয়েছে।
এর আগে, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস যেখানে ৪৪টি আসন পেয়েছিল, এবার পেয়েছে মাত্র ২৩টি আসন। এমভিএ জোটের অন্য দলগুলোর মধ্যে শিব সেনা (উদ্ধভ ঠাকরে) পেয়েছে ২১টি আসন। শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ১৪টি আসন।
এদিকে, মহারাষ্ট্রে এনডিএ জোটের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ১২৫টি আসন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি মহারাষ্ট্র বিধানসভায় পেয়েছিল ১০৫টি আসন। এনডিএ জোটে বিজেপির অন্যতম সঙ্গী শিব সেনা (একনাথ সিন্ধে) পেয়েছে মাত্র ৫৪টি আসন এবং শারদ পাওয়ারের ভাতিজা অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি ৩৪টি আসন পেয়েছে।
অপরদিকে, ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার প্রথম দিকে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট এগিয়ে থাকলেও পরে চূড়ান্ত গণনা শেষে ক্ষমতাসীন জনমুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেসের জোট ইন্ডিয়ায় জয়লাভ করে। এর মধ্য দিয়ে বিজেপি রাজ্যটিতে বাংলাদেশি ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও মুসলিমবিরোধী যে প্রচারণা চালিয়েছে তার প্রত্যাখ্যানের অনুষ্ঠিত ঘোষণা দিয়েছে ভোটারেরা।
বিজেপি প্রচারণা চালিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ঢুকে মুসলমানরা ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকার জনবিন্যাসে বদল ঘটিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার অনুপ্রবেশের প্রশ্ন নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বেটি, রোটি, মাটি’ বাঁচানোর।
মোদি বলেছিলেন, মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খণ্ডে ঢুকছে। সেখানকার আদিবাসী নারীদের বিয়ে করছে, রাজ্যের মানুষদের রুটিতে ভাগ বসাচ্ছে ও আদিবাসীদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে। এভাবে তারা জনবিন্যাসেও বদল ঘটাচ্ছে। অথচ এসব প্রচার আদিবাসী সমাজের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের ৮১ আসনের বিধানসভায় জনমুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেসের জোট মোট ৫০টি আসন পেয়েছে। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জোট পেয়েছিল ৪৮টি আসন। অর্থাৎ, এবারে জোটটি ২টি আসন বেশি পেয়েছে। এই নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চা পেয়েছে ৩১টি আসন, কংগ্রেস পেয়েছে ১২টি আসন এবং বিহারকেন্দ্রিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল পেয়েছে ৬টি আসন।
বিপরীতে, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯টি আসন। এর আগে, ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জোট পেয়েছিল ২৭টি আসন। অর্থাৎ, বিজেপির জোটও দুটি আসন বেশি পেয়েছে। এই ২৯ আসনের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ২৬টি আসন। বাকি ৩টি আসন পেয়েছেন জোটের অন্য দলগুলো। এ ছাড়া, অন্য দলগুলো বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে মাত্র ২টি আসন।
মন্তব্য করুন