যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোটকে ক্রমেই হুমকির মুখে ফেলছে চীন ও রাশিয়া। চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা জোটকে কোনঠাসা করার কোনো চেষ্টাই বাদ রাখছে না বেইজিং ও মস্কো। তারই ধারাবাহিকতায় ইউরোপে গুপ্তচরবৃত্তি আরও জোরদার করেছে দেশ দুটি। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনেও চীনা ও রুশ গুপ্তচরদের প্রভাব থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কি ইউরোপের গোপন বলে কোনো কিছুই থাকবে না জিনপিং ও পুতিনের কাছে এমন প্রশ্নই ঘুরছে সবার মুখে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অঞ্চলটিতে চীন-রাশিয়া এমনটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাবৃত্তি বেশ ভাবিয়ে তুলছে কর্মকর্তাদের। ইউরোপীয় সংসদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় কিছু সংসদ সদস্য ও কর্মীরা কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন বলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও লাটভিয়ার ইউরোপীয় সাংসদ টাটিয়ানা আশডানোকা কয়েকবছর ধরে রুশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
গত মাসে চেক প্রজাতন্ত্র রুশ প্রভাব থাকার অভিযোগ এনে ‘ভয়েস অব ইউরোপ' নামের একটি নিউজ আউটলেট নিষিদ্ধ করে। এর কয়েকদিন পর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দা ডে ক্রো জানান, ‘রুশ প্রপাগান্ডা প্রচার করতে' রাশিয়া ইউরোপীয় সাংসদদের অর্থ দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে জার্মানির উগ্র ডানপন্থি ইউরোপীয় সাংসদ মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহর সহকারী জিয়ান জি.কে চীনের হয়ে কাজ করার অভিযোগে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, চলতি সপ্তাহে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে চীনা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘পোলিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স' পিআইএসএম৷ সংস্থার কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা জানান, পুরো ইইউজুড়ে রুশ গুপ্তচরবৃত্তি চললেও ‘ইউরোপের যেসব দেশে ন্যাটোর অবকাঠামো ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে সেসব দেশে তারা বেশি সক্রিয়'।
সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সি বলছে, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যত ইউরোপীয় নাগরিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে মস্কোর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কার্যক্রমের প্রভাব কমাতে ইইউ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী ক্রো ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেটার ফিয়ালা।
ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কাউন্টার-টেরোরিজম বিষয়ে সহযোগিতা বাড়লেও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি এখনো অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করা হয়৷ এক্ষেত্রে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে কাজ করা সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন পিআইএসএম কর্মকর্তা এলসবিয়েটা কাসা।
মন্তব্য করুন