হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহতের পর নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে ইরান। আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ছয়জন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সেই তালিকায় নেই সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করে সম্প্রতি আবারও আলোচনায় এসেছিলেন আহমাদিনেজাদ। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন তিনি।
ইরানের সাবেক কট্টরপন্থি এই প্রেসিডেন্টকে মনোনয়ন দেয়নি দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। ২০১৭ ও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থিতার আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে দুবারই অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি।
গত ২ জুন প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধনের কথা জানান আহমাদিনেজাদ। তবে বিশ্লেষকরা সে সময় মত দিয়েছিলেন, গার্ডিয়ান কাউন্সিল খুব সম্ভবত তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না। কারণ হিসেবে তারা দেখান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপড়েন।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস সেনাদলের সাবেক সদস্য আহমাদিনেজাদ প্রথম ২০০৫ আলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে মেয়াদ পূর্তির পর পদ ছেড়ে দেন।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সে সময় আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের নেতৃত্বে সেই বিদ্রোহ দমন করা হয়।
সে সময়য় এই রক্তাক্ত দমনপীড়ন অভিযানে অসংখ্য মানুষ নিহত হন ও হাজারো বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে এসে খামেনির সমালোচনায় মুখর হন আহমাদিনেজাদ।
২০১৬ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে সতর্ক করে বলেন, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ‘দেশের স্বার্থপরিপন্থি’। এরপর ২০১৭ সালে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
২০১৮ সালে আহমাদিনেজাদ খামেনির সরাসরি সমালোচনা করেন, যা ইরানে খুবই বিরল। তিনি তাকে চিঠি পাঠিয়ে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ আয়োজনের আহ্বান জানান। ইরানের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খামেনির একছত্র আধিপত্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আহমাদিনেজাদ।
এরপর থেকেই খামেনির সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়।
ইরানের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন- পার্লামেন্টের রক্ষণশীল স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, অতি রক্ষণশীল সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাইদ জলিলি, তেহরানের রক্ষণশীল মেয়র আলিরেজা জাকানি এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদ ফাউন্ডেশনের অতি রক্ষণশীল প্রধান আমির হোসেন গাজিজাদেহ-হাশেমি।
এ ছাড়াও রক্ষণশীল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা মোহাম্মাদিকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শুধু একজন সংস্কারপন্থি প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অনুমোদন পেয়েছেন। তিনি হলেন, ইরানের পার্লামেন্টে তাবরিজের প্রতিনিধিত্বকারী আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান।
মন্তব্য করুন