ফেডারেশনের টানাপোড়েন শেষ, বয়কটের অচলাবস্থা থেকে সরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ফিরছেন স্থানীয় আম্পায়াররা। অচলাবস্থা দূর হলেও আম্পায়ারিং ইস্যুতে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বিদেশি আম্পায়ারদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এমন প্রশ্নকে পাত্তা দিচ্ছেন না দেশের হকি নিয়ন্তারা।
শ্রীলঙ্কার দেশানায়েকে দায়ান, মালয়েশিয়ার রামলি রোহিজান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কিম ইয়ং-সুকে এ লিগের জন্য উড়িয়ে আনা হয়েছে। দেশানায়েকে দায়ান ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ১৬ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। রামলি রোহিজান ছয় প্রতিযোগিতায় ১৮ ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করা দুই আম্পায়ার গত চার বছরের বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের (এমনকি এশিয়ান পর্যায়ের আম্পায়ারিংও করেননি) থেকে বিচ্ছিন্ন। এটা না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কিম ইয়ং-সু নাকি স্বীকৃতি আম্পায়ারই নন!
হকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (এইচ সি টি) ম্যাচ পরিচালনা করতে সম্প্রতি দেশে আসা এ কোরিয়ানের ছবি পাঠানো হয়েছিল তার এক স্বদেশি আম্পায়ারের কাছে। উদ্দেশ্য ছিল এ আম্পায়ারের প্রোফাইল জানা। আন্তর্জাতিক হকি সংস্থার এলিট প্যানেলের সদস্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওই আম্পায়ার ঘটনার পেছনের কারণ জানতে পেরে প্রথমে হাসেন। স্বদেশি কিম ইয়ং-সু সম্পর্কে শুরুতে তথ্য দিতে না চাইলেও এক পর্যায়ে বিস্তারিত জানালেন, তাতে অবশ্য নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ওই আম্পায়ার।
দক্ষিণ কোরিয়ার ওই আম্পায়ার কালবেলাকে বলেন, ‘স্বীকৃত আম্পায়ার না হলেও কিম ইয়ং-সু দক্ষিণ কোরিয়ার তৃণমূলের হকির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি মূলত কোচ হিসেবে বিভিন্ন দল ও স্কুল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত।’ একই নামের একজনের তথ্য পাওয়া গেল আন্তর্জাতিক হকি সংস্থায়, যিনি ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে টিম স্টাফ মেম্বার হিসেবে তিন প্রতিযোগিতার ১২ ম্যাচের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নারী অনূর্ধ্ব-২১ দলের এক প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে কোচের দায়িত্ব পালন করেন কিম। নারীদের সিনিয়র দলে দুটি প্রতিযোগিতায় সাত ম্যাচে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া বেশকিছু প্রতিযোগিতা ও ম্যাচে স্ট্যান্ড-ইন ম্যানেজার, টিম ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কোচ ও হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
এমন ব্যক্তিকে দেশের হকি ইতিহাসের নতুন যুগের সূচনায় সম্পৃক্ত করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় হকি সংশ্লিষ্টরা। এ সম্পর্কে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সদ্য বিলুপ্ত আম্পায়ার্স বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘যাদের দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করা হবে তাদের মান আমাদের আম্পায়ারদের চেয়ে ভালো হলে কোনো কথা নেই। কিন্তু নিম্নমানের আম্পায়ার এনে কেন আপনি তাদের পেছনে কয়েক লাখ টাকা খরচ করবেন?’
বিদেশি আম্পায়ারদের মান নিয়ে ওঠা প্রশ্নকে মনগড়া অভিযোগ উল্লেখ করে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতা শুরুর আগে স্থানীয় আম্পায়াররা ফেডারেশনকে জিম্মি করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা সে সুযোগ না দিয়ে বিকল্প পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে বিতর্কের কালিমা মাখাতে অনেকে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন।’ দক্ষিণ কোরিয়ান আম্পায়ার কিম ইয়ং-সুর মান নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন আম্পায়ারই এনেছি। তাদের আনা হয়েছে এশিয়ান হকি সংস্থার মাধ্যমে।’
কিন্তু কিম ইয়ং-সু নামে কোনো স্বীকৃত আম্পায়ারের তথ্য এশিয়ান হকি সংস্থা বা আন্তর্জাতিক হকি সংস্থা খুঁজে পায়নি। এমন ব্যক্তিকে স্বীকৃত ও মানসম্পন্ন হিসেবে কোথা থেকে আবিষ্কার করল বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন?