ড্রেসিংরুম থেকে মাঠ পাড়ি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে এগোচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তর-পশ্চিম পাশের গ্যালারি থেকে এক দর্শক মিরাজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেন। মিরাজও সায় দিলেন। কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে মিরাজদের কাছে বাকি দুদিন ভালো ব্যাটিংয়ের অবদার করলেন তিনি। মৃদু হেসে মিরাজ বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ, দোয়া করবেন।’
চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোর বোর্ডের এখন যে অবস্থা, তাতে বাংলাদেশের ভালো ব্যাটিং আর সমর্থকদের দোয়া ছাড়া কিছুই চাওয়ারও নেই। তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। দুই দিন বাকি থাকায় ফল আসবেই নিশ্চিত করে গেছেন মিরাজ। তাতে ঐতিহাসিক কিছু করতে না পারলে হার সঙ্গী করে ঢাকায় ফিরতে হবে টাইগারদের।
প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিং করা ভারত সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আজই নির্ধারণ হবে এ টেস্টের ভাগ্য। দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রানে দিন পার করেছে বাংলাদেশ। ২৫ রানে অপরাজিত নাজমুল হোসেন শান্ত ও ১৭ রান করে উইকেট থাকা জাকির হাসানদের সামনে ৪৭১ রানের পাহাড় ও ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ।
তৃতীয় দিনের উইকেট ব্যাটিংবান্ধব মনে হয়েছিল। পুরো দিনে বোলারদের ঝুলিতে জমেছে মাত্র ৪টি উইকেট। রান উঠেছে ৩১২। সাগরিকার উইকেট যে ধীরে ধীরে ব্যাটিংবান্ধব হয়ে উঠছে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়, স্কোর বোর্ড তাই বলছে। অবশ্য দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনটাও নিজেদের করে নিয়েছে লোকেশ রাহুলের দল। স্নিগ্ধ সকালে মোটে ১২ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ১৭ রান যোগ করতেই দেড়শতে ইনিংস শেষ করে তারা। এরপর পুরো দিনটাই নিজেদের করে নিয়েছে ভারত।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ফলোঅনে রেখে ২৫৪ রানের লিড পেয়েছিল রাহুলের দল। চাইলে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে পারত তারা। কিন্তু কিছুটা অবাক করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সফরকারীরা। প্রথম সেশন দেখে বুঝে পার করে দেন রাহুল ও শুভমান গিল। মধ্যাহ্নভোজ বিরতির পর লিড বড় করতে শুরু করেন তারা। রাহুলকে (২৩) ফিরিয়ে ৭০ রানের এ জুটি ভাঙেন খালেদ আহমেদ। ফাইন লেগে থাকা তাইজুল ইসলামের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক।
দ্বিতীয় দিন চোট পাওয়ায় গতকাল মাঠেই নামেননি পেসার এবাদত হোসেন। পুরো সময় মাঠে থাকলেও বোলিংয়ে আসেননি সাকিব। পাঁজরের চোটে ভুগছেন তিনি। দুই বিশেষজ্ঞ বোলার না থাকায় তাইজুল, মিরাজ, খালেদের সঙ্গে বোলিং করেছেন ইয়াসির, লিটন ও শান্ত। তাতে বোলিং বিভাগে দুর্বলতা বয়ে বেড়িয়েছে পুরো ইনিংস। ১১ ওভার করেছেন অনভিজ্ঞ তিন বোলার। প্রথম ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি ব্যক্তিগত শতক হাঁকিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ওপেনার গিল।
তিনে নামা চেতেশ্বর পুজারা চার বছর পর পেলেন সেঞ্চুরি। ৫২ ইনিংসের ব্যবধানে তার সেঞ্চুরি হলেও মাঝের সময় ধারাবাহিক রান করেছিলেন তিনি। পুজারার শতরান উদযাপনে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশের সামনে ৫১২ রানের বিশাল লিড রেখে। দিনের শেষ সেশনের প্রথম ঘণ্টা ব্যাটিং করেছে ভারত। এরপর ব্যাটিংয়ে এসে ৪৩ মিনিট ছিলেন শান্ত-জাকির। ব্যাটের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রেখে ৪২ রানের জুটিতে দিন পার করেছেন তারা। আজ সকালের সেশনে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে টাইগাররা।