বর্তমানের ক্রিকেট প্রেক্ষাপটে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যে বোর্ডগুলোর জন্য নিশ্চিত স্বর্ণখনি এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধুঁকতে থাকা ক্রিকেটে দর্শকদের দেখা একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেই পাওয়া যায়। তাই বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রিকেট বোর্ডই এখন ঝুঁকছে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগের দিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর আরও কয়েকটি থাকলেও ক্রিকেট ভক্তদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শুধু একটিই টুর্নামেন্টই সেটি হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর হওয়ার কারণে এবার এই টুর্নামেন্ট ঘিরে আকর্ষণও বেশি। ১৯ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএলের আসর। সাত ফ্রাঞ্চাইজি দল নিয়ে হওয়া এই আসর শেষ হবে পহেলা মার্চ। আসর শুরু হওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক বিপিএলের দলগুলো সম্পর্কে। প্রথম পর্বে থাকছে খুলনা টাইগার্স।
বিপিএলের জন্মলগ্ন থেকেই খুলনা বিপিএলের সাথেই আছে। প্রথম কয়েকটি আসরে দলটি খেলেছিল খুলনা রয়্যালস নামে। এরপর নাম পাল্টে তারা হয় খুলনা টাইটান্স। তবে শেষ চার আসরে দলটি খেলেছে খুলনা টাইগার্স নাম নিয়ে। প্রথম থেকে থাকা দলটির অবশ্য সাফল্য খুব কম। খুলনার দলটি একবারই মাত্র ফাইনাল উঠেছিল। তবে ২০১৯ সালের সে ফাইনালে শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। প্রথম আসরে অবশ্য সেমিফাইনাল খেলেছিল তারা। এরপরের সাফল্য তাদের ২০১৩, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২২ সালে প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়া। তবে এর আগের আসরে লিগ পর্বই পার হতে পারেনি খুলনার দলটি। এবার অবশ্য অন্তত ফাইনাল পর্যন্ত যেতে চায় দলটি।
এবারের আসর দিয়ে খুলনার প্রধান কোচ হিসেবে অভিষেক হচ্ছে তালহা জুবায়েরের। এর আগে সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এবারই প্রধান কোচ হিসেবে আসছেন তিনি। বিপিএলের দশম আসরে খুলনার প্রথম ম্যাচ ২০ জানুয়ারি। প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
খুলনায় বলার মতো কোনো বড় তারকা ক্রিকেটার না থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় দলের বেশকিছু নাম আছে দলটিতে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এনামুল হক বিজয়, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মাহমুদুল হাসান জয়, রুবেল হোসেনদের মতো তারকারা। বেশকিছু পরিচিত বিদেশি ক্রিকেটারও রয়েছে দলটিতে। যার মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস, শাই হোপ, শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, কাসুন রাজিথা এবং পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র ও সদ্য দলে নেওয়া মোহাম্মদ ওয়াসিম অন্যতম।
দেশি ও বিদেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়ায় সন্তুষ্ট কোচ তালহা জুবায়ের, ‘দল নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমাদের দলের সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটাররা যথেষ্ট পরিপক্ব। সবাই নিজেদের সেরাটা দিতেই প্রস্তুত।’
ভালো খেলোয়াড় থাকায় দলের কোন বিভাগ শক্তিশালী- এই প্রশ্ন উঠে আসে খুলনার কোচ তালহার কাছে। তিনি জানান, তার দলের সেরা শক্তি বোলিং বিভাগ, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। দলের পেস বিভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ, রুবেলের মতো ফাস্ট বোলার রয়েছেন। তরুণ পেসাররাও ভালো।’
খুলনার পেস বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার রুবেল হোসেন। তাকে সাহচর্য দেবেন তরুণ পেসার নাহিদ রানা, সুমন খান, মুকিদুল ইসলাম এবং তিন বিদেশি ফাহিম আশরাফ, কাসুন রাজিথা ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। দলের একমাত্র বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। দলে অলরাউন্ডার চারজন। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র অলরাউন্ডার নাহিদুল ইসলাম। যিনি অফ স্পিন অলরাউন্ডার। বিদেশিদের মধ্যে অফ স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, সিমিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ও সিমিং অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা ও পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ ওয়াসিম। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার দুজন- এনামুল হক বিজয় ও যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলী। এনামুল হক বিজয়কে আবার অধিনায়ক করা হয়েছে। রোববার (১৫ জানুয়ারি) দলটি অনুশীলন শুরু করেছে বিকেএসপিতে।
খুলনার ব্যাটিং লাইনে রয়েছেন স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান জয়, হাবিবুর রহমান সোহান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, পারভেজ হোসেন ইমন এবং বিদেশি কোটায় দুই ক্যারিবীয় শাই হোপ ও এভিন লুইস।
ব্যাটিং, বোলিং বিভাগকে শক্তিশালী বিবেচনা করেও ফিল্ডিং বিভাগকে অবশ্য সবচেয়ে শক্তিশালী বলেছেন খুলনার কোচ তালহা, ‘আমাদের দলে তরুণ ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি। আমি বিশ্বাস করি আসরের সেরা ফিল্ডিং সাইড হবে আমাদের।’
এখন দেখার বিষয় এবারের আসরে তাদের অবস্থান কোথায় হয়?
একনজরে খুলনা টাইগার্স
স্থানীয় খেলোয়াড়
নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, রুবেল হোসেন, পারভেজ হোসেন, হাবিবুর রহমান, নাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, এনামুল হক, মুকিদুল ইসলাম, আকবর আলী, সুমন খান, নাহিদ রানা।
বিদেশি খেলোয়াড়
এভিন লুইস, ফাহিম আশরাফ, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, শাই হোপ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, কাসুন রাজিতা, দাসুন শানাকা।
অধিনায়ক: এনামুল হক বিজয়।
কোচ: তালহা জুবায়ের।
গত বিপিএলে অবস্থান: পঞ্চম।
মন্তব্য করুন