২০১২ সাল থেকে শুরু। হয়ে গেছে ৮টি আসর। তবে বিপিএল এখনো সেই পেশাদারিত্বের জায়গায় যেতে পারেনি। যা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিসিবিকে এক প্রকার ধুয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বলেছিলেন, তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক করে দেবেন।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসর। তার আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলেন সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অনুমিতভাবে সাকিবের প্রসঙ্গ উঠল এখানেও। মাশরাফি জানালেন বিপিএল নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি।
কেমন বিপিএলের অপেক্ষায় আছেন? শুরুতে এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘শুরু হওয়ার পর বোঝা যাবে। তবে প্রত্যেকবারই খেলা শুরু হওয়ার পর তো খেলাটা ভালোই হয়। প্রতিযোগিতা থাকে। সবাই সবার দল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আশা করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে।’
এরপরই উঠে আসে সাকিবের বিস্ফোরক মন্তব্য। বিপিএলে থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও অনেকটা সুশৃঙ্খল। মাশরাফি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। আমরা ক্যারিয়ারের শুরু থেকে দেখে এসেছি, ঢাকা লিগকে খেলোয়াড়রা অনেক গুরুত্ব দেয়। বিপিএল তো একটা অরগানাইজেশনের, আয়োজন করার ব্যাপার থেকে। ক্যালেন্ডার ইয়ারটা সেটা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালেন্ডারে বিপিএল কখন শুরু হবে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিপিএলের সূচিটা আগে ঠিক করা দরকার। এখন পিএসএল, ইউএই, দক্ষিণ আফ্রিকান লিগের সঙ্গে যদি সব এক হয়ে যায়, তাহলে ঝামেলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা আরেকটা জায়গায় আছে, সেটা হচ্ছে—স্পন্সরশিপ এবং মালিকানা। এই একটা জায়গায় বিশাল শূন্যস্থান থেকে যায়। আরেকটা জিনিস, অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বেনিফিট পায় বোর্ড থেকে। সেটা যেহেতু হয় না, তখন আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ থাকে, স্পন্সরশিপ থেকে সে অর্থটা বের করে আনা। এখানে একটা শূন্যস্থান (গ্যাপ) থেকেই যায়। আরেকটু অরগানাইজ করতে পারলে ভালোই হয়। কিন্তু সত্যি বলতে, বাংলাদেশে ওই পরিমাণ মার্কেট ভ্যালুও নেই। এই ধরনের টুর্নামেন্টের জন্য যে পরিমাণ মার্কেট ভ্যালু থাকার প্রয়োজন, ওটা নেই। আমার কাছে মনে হয়, একপর্যায়ে জোর করে আসা হয় বা আনা হয়। মার্কেট ভ্যালু থাকলে হয়ত আসার ব্যাপার থাকত।’
‘আইপিএলে গ্যালারির টাকায় হোম ফিফটি-ফিফটি করে। এ রকম অনেক কিছু বিষয় আছে। এগুলো করলে হয়ত আরেকটু জমজমাট হতো। কিন্তু এই টুর্নামেন্টটা গুরুত্বপূর্ণ।’
মার্কেট ভ্যালু না দলগুলোর, এটা বিশ্বাস করেন না সাকিব। তার বক্তব্যে সেটা তিনি বলেছেন, দরকার বোর্ডের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘আপনার দলের স্পন্সরশিপ কতটুকু আসতে চাচ্ছে, এগুলোতো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। একটা দল যখন জানে, আমি এই দলটার মালিক, আমি পরবর্তী ১০ বছর–৭ বছর এটার মালিক। তখন সে দুই বছর লস করতে পারে। ঠিক আছে, আমি আমার দলকে নিয়ে কাজ করব, মার্কেটে প্রমোট করব, ডিসিপ্লিন ওয়েতে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এজন্য দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারছে না। তবে যদি এটি প্রোপার অরগনাইজ করে করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে, আমার কাছেও মনে হয়, অন্তত ৭, ৫ বা ১০ বছর যেটার যে মালিক, তাদের সঙ্গে টিম করা। নির্দিষ্ট তারিখে করা। তখন কিন্তু অনেক কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব।’
গতবার সাকিব বলেছিলেন বিপিএল ৪-৫ নম্বরেও পরে না। এবার বললেন তালিকায়ই পরে না। আসলে বিপিএলের মানটা কোথায় আছে, আপনার কি মনে হয়? এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘পরিবেশ দেখলে আপনার তা-ই মনে হবে। কারণ, এক মাঠে ৬-৭ দল অনুশীলন করছে। রংপুর যেমন তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদের মাঠে অনুশীলন করছে। এ বিষয়গুলো কিন্তু ম্যাটার করে। আমাদের ওই নির্দিষ্ট দলের সুযোগ-সুবিধা। ওই যে বললাম না, অরগানাইজ সঠিক পন্থায় করতে হবে। তখন হয়তবা এটা হবে। আপনি খালি চোখে যে কেউ এসে দেখে, একই মাঠে সবকিছু হচ্ছে, অনুশীলন হচ্ছে। এটা হযবরল ব্যাপার, এটা বলতে পারে। কিন্তু দিন শেষে খেলার মাঠে খেলা কিন্তু খেলা মতোই হয়। একটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য আছে, শুরুর দিকে একটা হাইপ তোলার ব্যাপার আছে, এ জিনিসটা হয় তো আমরা শুরু থেকেই পারিনি, এটা সত্য।’
‘এই ছোট ছোট জিনিসগুলো নিয়ে যখন ক্রিকেট বোর্ড চিন্তা করে। এগুলোয় কিন্তু বড় আকার ধারণ করে। এগুলো যদি পরিবর্তন করে, তাহলে তো পরিবর্তন হবেই। পরিবর্তন না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। এমনও না, আমাদের মাঠ নেই। ফতুল্লা পড়ে আছে, আরও কিছু মাঠ পড়ে আছে। বাইরেও আছে। এগুলো যদি একটু অরগনাইজ করা যায় খারাপ হয় না।’