২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে এক ছাত্রলীগ নেতার কক্ষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় আবরার ফাহাদকে। তারপরেই আন্দোলনের মুখে রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েটে। নতুন করে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে বুয়েটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য। এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ।
তিনি বলেছেন, একজন বুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, আবরার ফাহাদের ভাই হিসেবে বলতে চাই, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসলে তা বুয়েট ক্যাম্পাসকে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত করবে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফাইয়াজ তার 'Abrar Faiyaj নামক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই মন্তব্য করেন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
ফেসবুকে আবরার ফাইয়াজ লিখেন, ২০০২ সালে সনি আপুকে হত্যার পরে খুব বেশিদিন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল না। যার ফল দেখি আমরা আরিফ রায়হান দীপের হত্যাকাণ্ডে। তারপরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। যার সর্বশেষ শিকার আবরার ফাহাদ।
আবরার ফাহাদ হত্যায় যারা আসামি হয় তারা সবাই একটি হলের। কিন্তু, প্রতিটি হলেই এ রকম ২০-২৫ জন করে ছিল যারা নিজেদের হলেও একইরকম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারত। কিন্তু, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এরা কেউ কিন্তু পরবর্তীতে আর কিছু করেনি।
গত সাড়ে ৪ বছরে বুয়েটের কোনো জুনিয়রের গায়ে কোনো সিনিয়র হাত তোলেনি, কেউ কাউকে কোনো নিয়ম বেঁধে দেয়নি যা দেশের অন্য প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।
ধরলাম, ২০০ জনই চাইল যে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসুক। তাও বর্তমান ৬০০০ শিক্ষার্থী থাকছে যারা ছাত্ররাজনীতি চায় না। কিন্তু, সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যদি ছাত্ররাজনীতি চালু করা হয় তাহলে যা হবে- শত শত আবরার ফাহাদ কিংবা সনিকে হত্যা করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করবে না। কেননা, যারা প্রতিবাদ করবে তাদের পেটানোর মানুষদের অভাব থাকবে না। তারা দাবি জানাতে পারবে না যে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। কেননা, যদি প্রশাসন করেও নিষিদ্ধ তা আদালতের বিরুদ্ধে যাবে। তাই, এরা একপ্রকার ইনডেমনিটি পেয়ে যাবে যে, এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবে না।
যেখানে ৬০০০ শিক্ষার্থীর মতামতকে মূল্য দেওয়া হচ্ছে না সেখানে এই ১০০-২০০ জন কী পরিমাণ বর্বরতা চালাবে কল্পনা করুন। ২০২৭ সালেই আরেক আবরার পাওয়া যাবে হয়তো। অথবা এবার আর লাশই পাওয়া যাবে না। কারণ, এক ভুল দুইবার কেউ করে না। শিক্ষকরাও কিছু করতে পারবেন না। কেননা, তারাও নিরাপদ নন। ফলাফল ছাত্ররাজনীতি চালুর ২-৩ মাসের মধ্যে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত হবে বুয়েট। এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর কোনো আশা আকাঙ্ক্ষা থাকবে না। কেননা তাদের মতামতের মূল্যই তো নেই কারও কাছে। ঐ অবস্থায় দেশের কোনো অভিভাবক আর নিজের সন্তানকে এখানে পাঠাবে না। তাই বঙ্গবন্ধু যেই বুয়েটকে নষ্ট করতে নিষেধ করে গেছেন তাকে দয়া করে এ রকম ধ্বংস করে দিবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
এ প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ও ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালু করার দাবিতে গত রবিবার ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে এবং এরপর কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে প্রবেশ করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
সবশেষ, গতকাল সোমবার বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল উচ্চশিক্ষালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মন্তব্য করুন