পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাহারকে চাকরি দিল আইসিটি বিভাগ

সোমবার রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে বাহারের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সোমবার রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে বাহারের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।ছবি : কালবেলা

পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাহার উদ্দিন রায়হানকে চাকরি দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। বিভাগের এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পে ‘প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক’ পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে বাহারকে। এই পদে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেন্টার ফর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশম সিস্টেমসের (পিএমআইএস) প্রশিক্ষণে সমন্বয় করবেন বাহার।

আজ সোমবার রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে বাহারের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

কক্সবাজারের চকরিয়ার লক্কারচরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাহার উদ্দিন রায়হান। ২০০৪ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে ঝলসে যায় বাহারের দুই হাত। সেই থেকে তার এক হাত নেই, আরেক হাত আছে কনুই পর্যন্ত। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি, এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন বাহার।

আইসিটি বিভাগ জানায়, বাহার মোটরসাইকেল চালাতে পারেন; মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারেন। কিন্তু চাকরি দেওয়ার জন্য যারা যোগাযোগ করেছে, তারা চাকরি দেওয়ার আস্থা পায়নি শুধু দুই হাতের দিকে তাকিয়ে।

আইসিটি বিভাগে চাকরি পেয়ে চোখের জলে বাহার জানান, তিনি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন তার স্বস্তি যে তিনি মাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোনো অস্ত্র ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেমন যুদ্ধে জিতেছেন, তেমনি এক অদম্য যোদ্ধার নাম বাহার। ইচ্ছাশক্তি প্রবল থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বাহার উদ্দিন বাহার আমাদের সামনে উজ্জ্বলতম একটি দৃষ্টান্ত। দুই হাত নেই, অথচ মুখে কলম আটকে খাতায় লিখে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন, অর্জন করেছেন দক্ষতা।’

পলক আরও বলেন, ‘আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, সে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে উদ্ভাবনী, বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী, সংগ্রামী। কোনো বাধায় নিজেরা দুর্বল হবে না এবং শারীরিক কোনো বাধা তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না। ইডিজিই প্রকল্প থেকে যে এক লাখ তরুণকে অগ্রসরমান প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, বাহার তাদের জন্য প্রেরণার উৎস। এটা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে থাকা প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মানসিকতার কারণে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমার, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইডিজিই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মুহম্মদ মেহেদী হাসান, পলিসি অ্যাডভাইজার আব্দুল বারী, কম্পোনেন্ট টিম লিডার ড. মাহফুজুর ইসলাম শামীমসহ আইসিটি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com