চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিভিন্ন ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে একের পর এক জন্মনিবন্ধন বানিয়ে নিচ্ছেন হ্যাকাররা। চসিকে পাঁচটি ওয়ার্ডের অন্তত ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন হ্যাকারদের মাধ্যমে বানিয়ে নেওয়ার তথ্য মিলেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে জিডি করা হয়েছে। তবে জন্মনিবন্ধন সহকারীরা বলছেন, আইটিবিষয়ক বিভিন্ন সংকট ও দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা না গেলে এ সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়বে।
গতকাল রোববার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চসিকের ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের ৪০৮টি জন্মনিবন্ধন, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১০টি, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে চারটি, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৪০টি, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৮৪টি জন্মনিবন্ধন বানিয়ে ওয়েবসাইটে আপলোড দিয়েছেন হ্যাকাররা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৩৪০টি জন্মনিবন্ধন বানিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া এ ওয়ার্ডেই সর্বোচ্চ ৪০৮টি জন্মনিবন্ধন হ্যাকারের মাধ্যমে বানিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড সচিব মনোতোষ বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, ১০ জানুয়ারি প্রথম জন্মনিবন্ধন সনদ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এরপর ১২ জানুয়ারি ৫০টি এবং সবশেষ রোববার ৩৪০টি জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাক করে আপলোড করা হয়েছে।
হ্যাক হওয়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছেন তারা। বেশিক্ষণ আইডিতে লগইন না রাখাসহ পাসওয়ার্ড ও পিসির সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। দুই সপ্তাহ ধরে যখন তারা সার্ভারে ঢুকছে, তখন দেখতে পাচ্ছে হ্যাকাররা সার্ভার নিয়ন্ত্রণে এনে জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করা হচ্ছে।
একজন জন্মনিবন্ধন সহকারী কালবেলাকে বলেন, এখানে অনেক জটিলতা আছে। যেমন আইটিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা কন্ট্রোল করা হয় ঢাকা থেকে। ডিসি অফিসও এটার কাজ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে কোনো জটিলতায় পড়লে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায় না। যেমন জন্মনিবন্ধন সনদে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) নিয়ে জটিলতা দীর্ঘদিনের। কারও কারও জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে ওটিপি আসে না। এটা দিয়ে মানুষ ভোগান্তির শিকার হলে আমাদের দোষারোপ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নেওয়ার ঘটনা পুরোনো হলেও চট্টগ্রাম সিটিতে সাম্প্রতিককালে জন্মনিবন্ধন সনদ জালজালিয়াতির বড় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে চসিক। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ওয়ার্ডের লগইনের বিপরীতে যেসব জন্মনিবন্ধন হয়েছে, সেগুলোতে রাজশাহী, জামালপুরের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু নিবন্ধন নম্বর আমার ওয়ার্ডের। পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে ১০টি জন্মনিবন্ধন সনদ হ্যাকিং করে আপলোডের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় থানা ও চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) আসিফ মহিউদ্দীন কালবেলাকে বলেন, এখনো পর্যন্ত দুটি ওয়ার্ড থেকে জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাকের তথ্য শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জানা গেছে, ২০০১ সালে কাগুজে জন্মনিবন্ধন সনদ শুরু হয়। ২০১০ সালে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ডিজিটাল নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়। ২০১৯ সালে সরকার নতুন সফটওয়্যারে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংরক্ষণ শুরু করে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ওটিপি যথা সময়ে না আসা, ভুয়া নিবন্ধন বানিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। শুরুর দিকে শুধু একটি আইডি থেকে নিবন্ধন সহকারীরা সার্ভারে ইনপুটের দায়িত্বে থাকলেও ২০১৯ সালে কাউন্সিলরের আইডি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দ্বৈত আইডি লগইনের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানিয়েছেন নিবন্ধন সহকারীরা। তবে কাউন্সিলররা নন, সেই আইডি থেকে জন্মনিবন্ধন সহকারীরাই ইনপুট দিয়ে থাকেন।
চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, সার্ভার হ্যাক করে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ বানিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। জালিয়াতি করে তৈরি করা সনদগুলো বাতিলের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।