অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবিরোধী যুব সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্য চলছে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের জন্য দায়ী ভারত। তারা আওয়ামী লীগের মতো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করতে পারবে না। এ জন্য বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে। পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে বলে মিথ্যাচার করছে। আমরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন এর তদন্ত করে। বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা ঘটেছে সেগুলো রাজনৈতিক ঘটনা।
তিনি বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দেয়, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়, তাহলে আমাদের উচিত চীনের সঙ্গে তিস্তার চুক্তি করা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী কী চুক্তি রয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। আমরা দেখেছি, সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে পাখির মতো হত্যা করছে। বিজিবিকে বলবো, বিএসএফ একজনকে গুলি করলে আপনারা দুইজনকে গুলি করবেন। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ভিপি নুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে তারা তাদের চায়ের আড্ডার লোকদের নিয়ে সরকার গঠন করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন না করে, রাজনৈতিক দলগুলোর কথা না শুনে, তারা তাদের মতো কাজ করছে। আমরা আগেও বলেছি- আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। তারা যদি সবার কথা না শুনে নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী কিংবা সার্কেলের কথা শুনে, তাহলে তো সবাই সরকারকে সন্দেহ করবেই। উপদেষ্টাদের বুঝতে হবে, তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা কী? জনগণের পালস না বুঝে কাজ করলে জনগণ তো সরকারের বিপক্ষে যাবে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যারা ক্ষমতায় ছিলো- তারা তাদের নিজেদের কথা চিন্তা করেছে, নিজেদের দলের কথা চিন্তা করেছে। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারও জরুরি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বীজ ২০১৮ সালে আমরা বপন করেছিলাম। কিন্তু যে সরকার গঠিত হলো, এখানে সব বিপ্লবীদের প্রতিনিধি কোথায়? ’৭১ এর পরে যেভাবে একপাক্ষিক সরকার গঠিত হয়েছিলো, ঠিক এবারও তাই হয়েছে। বিপ্লব বেহাত হয়ে গেছে। শহীদের তালিকা কোথায়, শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ কোথায়, আহতদের কেন সুচিকিৎসা হচ্ছে না?
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুনের সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি রাহুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, সহসভাপতি শাকিল আহমেদ তিয়াস, হোসাইন নুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মুন, অর্থ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান, মহানগর দক্ষিণ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড়ে এসে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন