দীর্ঘ এক যুগ পর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সেনাকুঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়েন খালেদা জিয়া। বিএনপি তখন অভিযোগ করেছিল, বল প্রয়োগের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে।’
দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। প্রতি ছয় মাস পরপর তার এ সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। মুক্তির পর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকলেও অসুস্থতার কারণে তাকে একাধিকবার বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট পুরোপুরি মুক্তি পান খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়। বর্তমানে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় রয়েছেন। লিভার সিরোসিসসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামী মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য যেতে পারেন। এ লক্ষ্যে এখন জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সবশেষ সিলেট সফর করেন খালেদা জিয়া। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্থায়ী মুক্তির পর সেনাকুঞ্জের এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের পর প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
খালেদা জিয়া ছাড়াও ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আটক হয়েছিলেন তারেক রহমান। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। বর্তমানে লন্ডন থেকেই স্থায়ী কমিটির পরামর্শে দল পরিচালনা করছেন তারেক রহমান। এ বছর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির ২৬ জন আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদার নেতা।
সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান এই আমন্ত্রণপত্র গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। সেনাকুঞ্জের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন