স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার দেশের প্রতিটা খাতকেই দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না। এমতাবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এবি পার্টি।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
এ সময় স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক ও গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শওকত আরমান। এবি পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, সহকারী সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।
প্রফেসর আব্দুল ওহাব মিনার ফ্যাসিস্ট সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দলীয় মুদি দোকানের মতো ব্যবহার করেছে। কীভাবে জনগণকে স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোটবিহীন অবৈধ সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না বলেই স্বাস্থ্য প্রশাসন, ঔষধ প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের অধীনে ক্রয়-বিক্রয় সর্বত্র বাকশালী চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের বিরোধিতা করার, ‘টু’ শব্দটি করার সাহস কারো ছিল না। তাই আজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব, চিকিৎসা ব্যয়ভার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেবাকর্মীদের সহযোগিতায় অপ্রতিরোধ্য দালাল চক্রের তান্ডব, রাজনৈতিক মেরুকরণ এর জন্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব-দলাদলি।
এসবের কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ । স্বাস্থ্য সেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে একশ্রেণির মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে এবং সেখানেও তারা প্রতারণার, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
এই সকল অনিয়ম দুর্নীতি যাদের দেখার কথা ছিল সেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, তারা নিজেদের সত্তা বিকিয়ে দিয়ে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে শুধু নেত্রী বন্দনায় ব্যাকুল ছিল। তাই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নিজ মুখে বলেছিলেন- আইনকানুন বিচার না করে বিদেশ থেকে আমি সিরিঞ্জ কিনেছি ভ্যাকসিন এনেছি। করোনাকালীন সময়ে পতিত সরকার সৃষ্টি করেছিল ডা. সাবরিনা ও সাহেদদের মতো চরিত্র।
২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মহাপরিচালকের ড্রাইভার মালেকের শত কোটি টাকার সন্ধান, কথিত বালিশ উত্তোলন ও পর্দা কেনা কাণ্ড সব ডিজিটাল হাসিনা সরকারের বিশেষ উপহার যার বিরুদ্ধে কথা বলার মত সাহস নামি দামি কোন একজন চিকিৎসক বা নাগরিকের ছিল না।
স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘদিনের অনিয়ম নৈরাজ্য রোধকল্পে এবং সাধারণ মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্য প্রফেসর আব্দুল ওহাব মিনার অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট নিম্নোক্ত দাবি সমুহ উপস্থাপন করেন; ১. ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা ২. ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা ৩. জনস্বাস্থ্য ও প্রাইমারি হেল্থ কেয়ারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া ৪. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ৫. বেসরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী চিকিৎসকদের ও ইন্টার্নদের সম্মানজনক ভাতা প্রদান ৬. রেফারেল সিস্টেম চালু করা
ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, রাষ্ট্র আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয় স্বাস্থ্য খাতের মাধ্যমে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার সুন্দর সাজানো সিস্টেম রয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জেলা পর্যায়ে জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে। শুধু হাসপাতাল গুলো কার্যকর না থাকায় মানুষ সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি বলব এই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোকে কার্যকর করতে হবে, সেই সঙ্গে আমাদের মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে।
ডা. আরমান বলেন, এবি পার্টিকে কেন্দ্র করে আমরা স্বাস্থ্য সেবাকে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে চিন্তা করছি। সেই সঙ্গে আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো প্রকাশ্যে ধুমপান নিষিদ্ধের আইন হলেও তা কার্যকর নয়, তিনি যেন এটা পুরোপুরি কার্যকর করার ব্যবস্থা করেন।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. রোহিত খান, ডা. আজম ইকবাল খান, ডা. রাকিবুল ইসলাম, ডা. ওয়াহিদ হৃদয়, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমেনা বেগম, সুলতানা রাজিয়া, তোফাজ্জল হোসেন রমিজসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন