দুলাল আচার্য
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:০৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা ও চট্টগ্রাম গণহত্যা

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা ও চট্টগ্রাম গণহত্যা

জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা সময়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। দৈবক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও এ হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলো কালো অধ্যায় হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সবসময় তিনিই ঘাতকের বুলেট-বোমার টার্গেট ছিলেন। কার্যত ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট যা সম্পূর্ণ করতে পারেনি, সেটাই বারবার করার চেষ্টা করেছে, এখনো করে যাচ্ছে স্বাধীনতার পরাজিত ঘাতক শক্তি। পিতার স্বপ্নপূরণে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই থেকেই প্রতিটি মুহূর্ত ঘাতকের নিশানায় তিনি। যে বুলেট দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া জাতির পিতাসহ পরিবারের সবাইকে পৃথিবীছাড়া করেছিল, সেই বুলেট শেখ হাসিনার পিছু নেয় দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই। কখনো সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, কখনো বঙ্গবন্ধুর খুনি ও তাদের অনুসারীদের মদদে, কখনোবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী গোষ্ঠীর ইন্ধনে ও সরাসরি সহযোগিতায়। প্রতিটি হামলায় শেখ হাসিনাই ছিলেন মূল টার্গেট। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বারবার বুলেট-বোমা তাড়া করে বেড়ায় তাকে? কেন বারবার হত্যাকারীদের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা? বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, প্রতিটি ঘটনায় রাজনৈতিক যোগসূত্র মিলে যায় ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি দলগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে।

তবে শেখ হাসিনার সাহস তাকে পরাভূত হওয়ার সর্বশক্তিমত্তাকে পর্যুদস্ত করে দেয়। তেজস্বী মনোভাব নিয়ে তিনি এগিয়ে চলছেন। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সেই ১৯৮১ সাল থেকে জনগণের ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চলার পথে তাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে রক্ষা করেছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এই পর্যন্ত শেখ হাসিনার হত্যাচেষ্টা রুখতে গিয়ে ৬৬ জন নেতাকর্মী-সমর্থক প্রাণ দিয়েছেন। তার একটি ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের। তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সময়ের কথা। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। নিহত যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা হলেন—হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আবদুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত। জানা যায়, সেদিন শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও এক পুলিশ সদস্যের রাইফেলের কানেকশন বেল্ট খুলে পড়ায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ইতিহাসে এই দিনটিকে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণীতে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে মুখিয়ে ছিল সারা দেশ। তৎকালীন ১৫ দলীয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমনের প্রহর গুনছিল লাখো ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী জনতা। বেলা দেড়টার দিকে শেখ হাসিনার গাড়ি কোতোয়ালি থানা হয়ে পুরোনো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অতিক্রম করছিল। এ সময় স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী মুক্তিকামী জনতার গণজোয়ার দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই সমাবেশ বানচাল করে দিতে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার (পাকিস্তান প্রত্যাগত পাকিস্তানি সেনাসদস্য) রকিবুল হুদার নির্দেশে গর্জে ওঠে পুলিশের রাইফেল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নেত্রীকে বাঁচাতে মানববর্ম তৈরি করেন। গুলিবর্ষণের পর আইনজীবীরা মানববেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রক্ষা করে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত গুলিতে ঝরে পড়ে কতগুলো তাজা প্রাণ। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বহু লোক শহীদ হন। আহত হন আরও তিন শতাধিক। যদিও নিহতের সংখ্যা বলা হচ্ছে ২৪ জন। কিন্তু এ সংখ্যাটা আরও বেশি। কারণ, সেদিন অনেক লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা নিহতের সংখ্যা ৩০ জন। কারও কারও মতে সেটি ৩৬ জন। লাশ গুম করে ফেলার কারণে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, নৃশংসতার একপর্যায়ে পুলিশের কড়া পাহারায় নিহতদের রাতের আঁধারে নগরীর অভয়মিত্র মহাশ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। উল্লেখ্য, সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান ফটকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে নিহত ২৪ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে।

জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার ওপর যতবারই হামলা হয়েছে, হত্যার চেষ্টা হয়েছে, ততবারই আরও সুসংগঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কর্মীরা বারবার ত্যাগের প্রমাণ দিয়েছেন দল এবং নেত্রীর জন্য। সময়ের প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন অসংখ্য কর্মী। আজ প্রতিহিংসার নৃশংসতম সেই ভয়াল দিন ২৪ জানুয়ারি। নেত্রীর জীবন বাঁচাতে যারা সেদিন জীবন দিয়েছেন, যারা মানববর্ম তৈরি করে নেত্রীকে বাঁচিয়েছেন—তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

দুলাল আচার্য, সহকারী সম্পাদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোলায় পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু

আলুর দামে নাভিশ্বাস

যে কারণে মোস্তাফিজের ওপর চটেছেন জাদেজা

চলতি বছরে হজ প্যাকেজের খরচ কমলো

রোববার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

দ্বিতীয় বিয়ের কারণে পুত্রের হাতে পিতা খুন

জেলেনস্কিকে ‘হত্যার ষড়যন্ত্রে’ সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার পোল্যান্ড নাগরিক

ক্ষেতে কাজ করার সময় হিটস্ট্রোকে কৃষকের মৃত্যু

পার্কে ডেকে তরুণীকে খুন, যেভাবে বদলা নিলেন মা

শেষ ওভারে ধোনির অবিশ্বাস্য কীর্তি

১০

প্রচণ্ড গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা

১১

আনোয়ার সিমেন্টে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা

১২

মৌয়ালকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল বাঘ

১৩

এসআইকে পিটিয়ে মাথা ফাটানোয় গ্রেপ্তার ১৬

১৪

লন্ডন মাতাতে যাবেন জেমস

১৫

লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

১৬

মার্কিন সংগীতশিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু 

১৭

সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য : রিজভী 

১৮

বিবর্ণ মোস্তাফিজে হতাশ বিশেষজ্ঞরা

১৯

ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নেবে সীমান্ত ব্যাংক, ৪০ বছরেও আবেদন

২০
*/ ?>
X