দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে কেউ নতুন সরকার মনে করে না বলে দাবি করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। নির্বাচন-পরবর্তী সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই সরকারে কোনো নতুনত্ব আছে কিংবা নতুন কোনো অ্যাপ্রোচ আছে–এটা কেউ মনে করে না। জনগণ মনে করে, আগের সেই নির্যাতনকারী, দখলদার সরকারই এখনো ক্ষমতায় আছে।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত একই রয়েছে উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, আন্দোলন আগের জায়গায় আগের মতো করেই আছে। সেটাকে কীভাবে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো যায়, তার কৌশল নিয়ে এখন আমরা ভাবছি। তবে এটা সত্য, আগের চেয়ে এই সরকারের নাজুকতা অনেক বেশি। মানুষের মধ্যে প্রতিবাদী এমনকি প্রতিরোধী স্পৃহাও এখন অনেক বেশি। ফলে সরকার এবার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে না, যদি আগামীতে আন্দোলনে আমাদের কোনো দুর্বলতা না থাকে। তার মতে, আন্দোলনকে বেগবান করতে এ মুহূর্তে যুগপতের সম্প্রসারণের আলোচনা না থাকলেও যুগপতের এ ধারণাটাই সবাইকে কাছে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সাক্ষাৎকারে মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের মেয়াদ, নির্বাচন-পরবর্তী আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, আগামীর আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজকুমার নন্দী
কালবেলা: সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে আপনারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছেন; কিন্তু আপনাদের দাবি পূরণ ছাড়াই নির্বাচন হয়ে গেল? এমন অবস্থায় আপনারা আগামীতে কী করতে চান?
মাহমুদুর রহমান মান্না: গত ৭ জানুয়ারি যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। মানুষকে আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম নির্বাচন বর্জন করতে। তারা ভোট বর্জন করেছে। আমরা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করব না, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন করব- সেজন্য লড়াই করছি। এটা আমি মানি যে, আমাদের সেই দাবিটি পূরণ হয়নি। আমরা হয়তো ফিজিক্যালি জয়লাভ করিনি, তবে পলিটিক্যালি বললে বলব মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং নিরঙ্কুশভাবে সরকারকে বর্জন করেছে। সেই বর্জন এখনো আছে। মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি কোনো রকম ইতিবাচক ধারণা জন্মেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনোভাবেই এ নির্বাচন স্বীকৃতি লাভ করেনি, কেউ নির্বাচনটাকে ভালো বলেনি। ফলে পরিস্থিতি যা ছিল সেখানেই আছে। সরকার কিছুই গেইন (অর্জন) করেনি, বরঞ্চ আমাদের প্রতি মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থনটা প্রকাশিত হয়েছে। নতুন দুই-একটি জিনিস যুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতের ইস্যুতে অর্থনীতি এখন এমনভাবে সংকটাপন্ন হয়েছে যে, সরকারের এখন হাফ ছেড়ে বাঁচা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতটা একই আছে। পরিস্থিতি আছে বরং সেটা আরও ম্যাচিউড হয়েছে।
কালবেলা: আগামীতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন?
মান্না: বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে হচ্ছে না। কারণ, এই সরকার গণতন্ত্র ও সংসদের কফিনে পেরেক মেরে দিয়েছে। এদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না বরং এদের অধীনে নির্বাচন ধ্বংস হয়ে যায়। যাচ্ছে তাই ব্যাপার হয়ে যায়, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, আমাদের আগে যে দাবি ছিল, অর্থাৎ এই সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন–সেই দাবি একই থাকছে। এর মধ্যে দুই-একটি জিনিসের গুরুত্ব একটু বেড়েছে যেমন–দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিষয়টি। দুর্নীতি-দুঃশাসন আগে ছিল, কিন্তু নতুন করে দুর্নীতির সূচকে তারা আরও দুইধাপ নিচে নেমে গেছে। সংসদ বলতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এগুলো মিলে আমরা মনে করছি যে, আন্দোলন আগের জায়গায় আগের মতো করে আছে। শুধু আন্দোলনের কৌশলটা নিয়ে আমরা ভাবছি যে, কী করে সেটাকে জয়ের জায়গায় পৌঁছানো যায়।
কালবেলা: অনেক দেশ এরই মধ্যে সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মনোভাবও এখন নমনীয় মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের এমন অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?
মান্না: জাতিসংঘ এই সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে, এই কথা বোধহয় ঠিকভাবে বলা হলো না। কোনো একটা দেশে নতুন যে কোনো সরকার এলে তখন আন্তর্জাতিক প্রটোকলে জাতিসংঘসহ অন্যান্য দেশ সেই সরকারকে অভিনন্দন জানায়। কারণ, সরকারের সঙ্গে সরকারের বা দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক তো থাকতে হবে। তাদের নানা ধরনের কানেকশন থাকে। সেটা রাজনীতির বাইরেও ব্যবসা, সংস্কৃতিসহ অনেক কিছু। আমেরিকার কথা ধরা যাক, তাদের কত বিলিয়ন ডলার এখানে ইনভেস্ট করা আছে। তারা যদি বলে, এই সরকারকে মানি না। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে সেসব টাকার কী হবে? এ ছাড়া আঞ্চলিক, স্থানীয়, আন্তর্জাতিক সিকিউরিটির প্রশ্ন- অনেক কিছু থাকতে পারে। এনগেজমেন্টটা কেউ এ রকম করে কেটে দেয় না। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক পরপর দুবার বলেছেন, তারা এই নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করেন, গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। একই কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, ইউরোপের প্রায় সব দেশই। ফলে এটা থেকে এ কথা বলার কোনো সুযোগই নেই যে, এই সরকারকে সবাই সমর্থন করছে, নির্বাচনকে ভালো বলছে।
কালবেলা: বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের আন্দোলনের মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সংসদ ও সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মান্না: সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দল, স্বতন্ত্র এমপি থাকেন; কিন্তু দ্বাদশ সংসদে স্বতন্ত্ররা বিরোধী দলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সংসদনেত্রী বলবেন, তোমরা আমার ডান হাত, বাম হাত। সব মিলিয়ে আমরা এক হাত। মানে সব মিলিয়ে একটা অজুহাত সংসদের। কে কীভাবে জিতেছেন, নির্বাচনে কী হয়েছে- সেটা আজ সবার কাছে পরিষ্কার। সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে দলের মধ্যে ভাঙন হয়েছে, জোটও ভেঙে গেছে। নিজেদের লোক নিজেদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। মারামারি, খুনোখুনি হয়েছে। সেই সংসদে যাকে বিরোধী দলের নেতা বানানো হয়েছে, তিনি বলছেন এই সংসদ কার্যকর হবে বলে মনে হচ্ছে না। সুতরাং এই সংসদ ও সরকার সম্পর্কে মূল্যায়ন করার কী আছে? এটা একটা সংসদীয় পদ্ধতির চূড়ান্ত উপহাস। এই সরকারকে কেউ নতুন সরকার মনে করে না।
কালবেলা: আপনারা তো আগের দুটি সংসদকেও অবৈধ আখ্যা দিয়েছিলেন; কিন্তু সেই সংসদ ও সরকার পুরো মেয়াদ বহাল থেকেছে। এবার ভিন্ন কিছু হবে বলে আশা করেন কি?
মান্না: একটা অবৈধ সরকার অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় তো থাকতে পারে। জার, সা ফুলগেন্সিও বাতিস্তা, হোসনি মোবারক, ফ্রান্সিস ফ্রাংকো এমন অনেক উদাহরণ আছে। বেশিদিন, পুরো মেয়াদ ছিলেন বলে কি তাদের বৈধ বলবেন? এদের বৈধ বলবার তো কোনো জায়গা নেই। এই সংসদের কোনো ফাংশনই তো হতে পারে না, সেখানে পুরো মেয়াদ থাকার প্রশ্ন আসছে কেন? এই সংসদে কোনো বিরোধী দলই তো নেই। সব সংসদ সদস্য, স্বতন্ত্ররা গিয়ে বলছেন, আপনি যা মনে করেন সেটাই করেন, আমরা আছি। আমরা তো আপনারই সন্তান, এ রকম একটা অবস্থা। কারা যে বিরোধী দল, সেটা বলতেও পারছে না। মনের কষ্টে জি এম কাদেরকে কিছু কথা বলতে দেখছি। যদি বলা হয়, এই সরকার টিকবে কতদিন? এটা সত্য, তারা দুটি টার্ম পুরো মেয়াদে থেকেছে। আন্দোলনে আমরা তাদের নামাতে পারিনি। এখন কী পারব? আগের চেয়ে এই সরকারের নাজুকতা অনেক বেশি। মানুষের মধ্যে প্রতিবাদী এমনকি প্রতিরোধী স্পৃহাও এখন অনেক বেশি। ফলে এই সরকার পুরো টার্ম যেতে পারবে বলে মনে করি না, যদি আন্দোলনে আমাদের কোনো দুর্বলতা না থাকে।
২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি করে নিয়ে গিয়েছিল। ন্যক্কারজনক ব্যাপার। তারপরেও আমরা দুই, আড়াই মাস কোনো প্রতিবাদই করতে পারিনি, প্রতিরোধ তো দূরের কথা। তবে এবার ৭ জানুয়ারির আগে থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবাদ, আন্দোলন অব্যাহত আছে। ‘ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ একটা দাবানল তৈরি করতে পারে’–যে কোনো সময় এমনটা হয়ে যেতে পারে। এ জন্য সরকার ৩০ জানুয়ারি সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল করতে দেয়নি। কারণ সরকার ভয় পায়, মিছিল বের হলেই না জানি কী হয়, এত তাড়াতাড়ি মিছিল বের হয়ে গেছে। আবারও বলছি, এই সরকারের নাজুকতা অনেক বেশি। এ জন্য আশাবাদী হওয়াই যায় যে, এই সরকার টিকবে না।
কালবেলা: সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন বেগবান করতে শিগগির যুগপতের সম্প্রসারণ হবে কি না?
মান্না: শিগগিরই যুগপতের সম্প্রসারণ হওয়ার কোনো প্রস্তাবনা টেবিলে নেই। এমন কোনো আলোচনাও নেই। তবে আমরা সব সময়ই বলি, আন্দোলন বেগবান করতে আন্দোলনের শক্তি যত বেশি বাড়ানো যায়, যত বেশি শক্তি সন্নিবেশিত-সমন্বিত করা যায়, সেটা ভালো–তা যে কোনো কায়দাতেই বা কৌশলেই হোক। সেই চেষ্টা আমাদের আছে। যারা যুগপতে নেই, আমরা তাদের সঙ্গেও তো আলাপ-আলোচনা করছি, এমনকি একসঙ্গে প্রোগ্রামও করছি। সেমিনার করেছি, গোলটেবিল করেছি এবং তারা আমাদের মতোই কথা বলেছেন। অন্তত একটা ব্যাপারে তারা সবাই একমত যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেওয়া যাবে না। এই সরকারের বদলে একটা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার এনেই নির্বাচনটা করব। সে জন্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সেই ধরনের সম্প্রসারণ ইতোমধ্যে আছে, তবে এটা কাঠামোগতভাবে হয়নি। একমঞ্চ বানানো বিষয়টি এ রকম নয়। যুগপতের যে ধারণা সেটাই আসলে সবাইকে কাছে আনার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। দেখা যাক, আগামীতে কী হয়।
কালবেলা: বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কখনো কোনো সমস্যা কিংবা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কি না?
মান্না : বিএনপি বড় দল, অনেক বড় দল। আমাদের জোটের তুলনায় অনেক বড় দল। সে হিসেবে মাঠে তাদের একটা প্রভাব নিশ্চয় আছে। সেই প্রভাবকে অস্বীকার করলে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হবে; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিএনপি যে রকম করে লিড করছে, আন্দোলন সে রকম করে হচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বিএনপির মধ্যে একটা লিয়াজোঁ কমিটি আছে। সেই লিয়াজোঁ কমিটি আমরা প্রায়শই বসতাম। দু-একবার আমাদের বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েই আমরা এগিয়েছি, আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। তবে মাঝে-মধ্যে এর ব্যত্যয়ও হয়েছে। ব্যস্ততা, তাড়াহুড়োতে কখনো হয়তো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। পরে আবার আমরা আলোচনা করে একটা সংশোধনও করে নিয়েছি। সে দিক থেকে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা আগামীতেও একসঙ্গে মিলে যুগপৎভাবে আন্দোলনটা করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, গণতন্ত্রটাকে প্রতিষ্ঠা করা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামত তথা রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন সেই লড়াইটাও করতে চাই। সে জন্য আমরা সবাই একমত হয়ে ৩১ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছি।
কালবেলা: নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক অবস্থা কী? আগামীতে দলের শক্তি আরও বাড়াতে কোন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মান্না: আমরা জোটের মধ্যে আছি, যুগপতেও আছি। তারপরে দলগতভাবেও আছি। দলীয়ভাবে নাগরিক ঐক্যের নিজস্ব কর্মসূচি আছে। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছি। রাস্তার মধ্যে কোনো একটা জায়গায় একটা লম্বা টেবিলের ওপর একটা বড় কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সই নিচ্ছি। মানুষজন আসছেন, স্বাক্ষর করছেন। তাদের যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছি। এ ছাড়া জোটগত কর্মসূচিগুলোতে আমরা আমাদের সাধ্যমতো অংশগ্রহণ করি, সেটা সফল করার চেষ্টা করি এবং তার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে আরও বেশি বেগবান করার চেষ্টা করছি। আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা যুগপৎভাবে এই আন্দোলন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিজয়ের দিকে যাব–এই প্রত্যাশায় লড়াই করছি।
কালবেলা: আওয়ামী লীগের বাইরে যেসব দল, প্রার্থী নির্বাচনে গিয়েছিল, তাদের অনেকে সরকারের সমালোচনা করছে। তাদের বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? আপনাদের চলমান আন্দোলনে আগামীতে তাদের পাশে চান কি না?
মান্না: আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের বাইরে যারা নির্বাচনে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই আওয়ামী লীগের নেতা। এ ছাড়া জোটের কিছু নেতা এবং নাম করা কিছু নেতাও ছিলেন। আমরা বরাবরই বলে আসছি যে, ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি, হয়েছে সিলেকশন, ওপর থেকে যেটা বলা হয়েছে। ভোটে পরাজয়ের পর মনের দুঃখে তারাও একই কথা বলছেন। তারা বলেছেন, ওপর থেকে বলে দিলেই তো এমপি হতে পারতাম; কিন্তু চাননি। প্রকাশ্যে তারা এটা বলছেন, মনে বড় কষ্ট। একটা গান আছে না, ‘মনে বড় জ্বালা রে’–এটা হলো সে রকম। মনের জ্বালা মনের মধ্যে রেখে তারা কষ্ট পেতে থাকবেন। নির্বাচনের মাঠে মানুষ তাদের গ্রহণ করেনি, কবে করবে, করলে কোন শর্তে করবে–জানি না। ওগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না। তাদের নিয়ে ভাবার এখন কোনো অবকাশ নেই। সুতরাং আমাদের আন্দোলনে তাদের ডাকছি না; কিন্তু যারা নির্বাচন করেননি, যুগপতেও নেই–তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চালু আছে, চালু থাকবে।
মন্তব্য করুন