
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি” গানটির মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির স্মৃতি আমাদের মননে ঢুকে গেছে। গানটি শুধু আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বহন করে না। এটি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। গানটি শুধুই গানই না। এটি ছিল পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ও আন্দোলন গড়ে তোলার একটি বড় শক্তি। এটি আমাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল।
বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরী যখন এই গানটি লিখেন সেই সময় ছিল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার (২১ ফেব্রুয়ারি ও ২২ ফেব্রুয়ারি) সময়। এই দুই দিনে পুলিশের গুলিতে অনেকে প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত অন্যতম৷ সেই প্রতিক্রিয়া থেকে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রফিকের মরদেহ দেখে আব্দুল গাফফার চৌধুরী এই কবিতাটি লিখেছেন। প্রথম দিকে ৪-৫ লাইন লিখেন। পরে আস্তে আস্তে পুরোটাই লিখেন যা পরবর্তীতে গানে রুপ নেয়।
যেখানে বাঙালি, যতদূর বাঙালি ও যতদূরে বাংলা ভাষাভাসী মানুষ থাকবে, সেখানে কোনোনা কোনোভাবে আমরা এই গানটি আমাদের গাইতে হবে।গানটিতে প্রথম সুর দেন আব্দুল লতিফ। তখন খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। পরবর্তীতে সুর দেন আলতাফ মাহমুদ। তিনি সুর দেওয়ার পর থেকে গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৯৫৪ সাল থেকে গানটি প্রভাত ফেরীতে গাওয়া শুরু হয়। এখনো চলছে। গানটি শুধু গান হিসেবে নয়। এটির মাধ্যেমে আদর্শিক দিক উন্মোচন হয়েছিল। প্রতিবাদ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
যেখানে বাঙালি, যতদূর বাঙ্গালি ও যতদূরে বাংলা ভাষাভাসী মানুষ থাকবে, সেখানে কোনোনা কোনোভাবে আমরা এই গানটি আমাদের গাইতে হবে। কারণ তার এই গানটি একটি জাতিসত্ত্বাার পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। বরিশালে জন্মগ্রহণ করা আবদুল গাফফার চৌধুরীর বর্নাঢ্য জীবনের অবসান হয় ২০২২ সালের ১৯ মে। জীবনের অর্ধেক সময় প্রবাসে কাটালেও নিজেকে বিছিন্ন করেননি বাংলাদেশ থেকে। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি” এই গানটির মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতির হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন তিনি।