কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) ডিজির দপ্তরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর হামলা, নারী কর্মকর্তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করা, প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দ্রুত বিচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত প্রতিষ্ঠানের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি খামার সড়কে এই আয়োজন করেন ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, বিভিন্ন বৈষম্য, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বেশকিছু দিন ধরেই ইনস্টিটিউটটির বিভিন্ন গবেষণাগারসহ প্রধান কার্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলছে।
এসময় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের অনেকের হাতে ‘সব বৈষম্য শেষ হয় শোষণ যখন বেশি হয়’; ‘প্রশ্নটা এবার অস্তিত্বের লড়াই হবে মরণের’; ‘দশ দিগন্তে খবর দে পক্ষপাতের কবর দে’; ‘আর নয় কালক্ষেপণ এবার হোক দুষ্টের দমন’; ‘এসপার ওসপার, কাজ যার ক্রেডিট তার’; ‘আর নয় পিরিতি, বৈষম্যের বহুত স্মৃতি’; ‘বিচার হোক লাঞ্ছনার, নইলে ছাড়ো দায়িত্বভার’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
মানববন্ধন থেকে কর্মকর্তারা ৯ দফা দাবি জানান। দাবিসমূহ হলো- মহাপরিচালকের কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের ওপর যারা হামলা ও লাঞ্ছনা করেছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচার করতে হবে; উপপরিচালক (প্রশাসন) পদ সৃজনের পূর্বেই অবৈধভাবে মো. শরিফুল ইসলামকে প্রদত্ত রুটিন দায়িত্ব বাতিল করতে হবে; বহিরাগতদের আগমনের পূর্বেই কারা এবং কী উদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের কার্যালয়ে কর্মচারীদের জড়ো করান তা শনাক্ত করতে হবে; মহাপরিচালকের কার্যালয়ে কারা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রহস্যজনকভাবে বহিরাগতদের রুমে প্রবেশ এবং নির্বিঘ্নে চলে যেতে দিয়েছে তা সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে; নারী কর্মকর্তাদের ভীত সন্ত্রস্তকারীদের বিচার করতে হবে; উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত এনক্যাডারমেন্টের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে; প্রতিষ্ঠানে বারবার বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আগমন প্রতিহত করতে হবে; কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দ্রুত বিচার করতে হবে।
কর্মকর্তারা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) বর্তমানে ক্যাডার ও নন ক্যাডার দুইটি নিয়োগবিধির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ কার্যক্রমে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণসহ অফিসের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে রায়ের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির ৮৯ জন নন ক্যাডার কর্মকর্তাকে বিশেষ বিধানের মাধ্যমে বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর এসআরডিআই এর সেমিনার কক্ষে মহাপরিচালক মো. জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে সকল সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রায় বাস্তবায়নের জন্য ৩ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্রপ্রেরণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা এই প্রস্তাবের ব্যাপারে স্পষ্টিকরণের জন্য একটি পত্র জারি করে। সেই পত্র প্রেরণের জন্য গত ২৩ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের দপ্তরে মামলার রায় প্রাপ্ত ৮৯ জন কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। আলোচনা চলাকালীন সময়ে কতিপয় কর্মকর্তার ইন্ধনে বহিরাগত ও অত্র প্রতিষ্ঠানের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী আলোচনারত কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণ হুমকি-ধামকি ও লাঞ্ছিত করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এনক্যাডারমেন্ট রায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. নূরুল হুদা আল মামুন, সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাছরীন বেগম এবং সেলিনা তাসনীন খানসহ অনেকে অংশ নেন।
মন্তব্য করুন