আমাজন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী এবং অন্যতম দীর্ঘ নদীপথ। পৃথিবীর অন্য যে কোনো নদীর চেয়ে এটি বেশি পানি ধারণ করে এবং মিঠাপানির ডলফিন, প্রায় ১০০ প্রজাতির বৈদ্যুতিক মাছ এবং ৬০ রকমের পিরানহা দেখা যায় এখানে। এতে আরও যে কত শত প্রজাতির জলজ গাছ আর প্রাণি লুকিয়ে আছে, তা আজও জানেন না অনেক গবেষক।
তবে এই দীর্ঘ নদীপথে বিভিন্ন আদি উপজাতির বসতি, অনেক ধরনের ছোট বড় জাহাজ বা নৌকাসহ অনেক কিছুর দেখা পাওয়া গেলেও যে জিনিসটির দেখা পাওয়া যাবে না, তা হচ্ছে সেতু!
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আমাজন নদীর অববাহিকায় কোনো সেতু নেই। আমাজনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মাইল। একে ঘিরে রয়েছে তিনটি দেশ—পেরু, কলম্বিয়া ও ব্রাজিল। কিন্তু তারপরেও এর অববাহিকায় কোনো সেতু নেই। কী এর কারণ, জানেন কি?
সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান ওয়ালটার কাফম্যান আমাজন নদীতে কোনো সেতু না থাকার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। কী সেই কারণগুলো চলুন জানা যাক...
স্থানীয়দের চাহিদা
কাফম্যানের মতে, আমাজনের অববাহিকায় যারা বসবাস করেন, তাদের আসলে সেখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, আদিকাল থেকে সেখানকার লোকজন আমাজনের একপাড় থেকে অন্যপাড়ে যেতে নৌকা এবং ফেরি ব্যবহার করে আসছে এবং এতেই তারা এখন বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাছাড়া পারাপার বা মালামাল নিয়ে নৌকায় করে আমাজন পার হতে সময়ও কম লাগে এবং তা সাশ্রয়ীও বটে।
আদর্শ স্থানের অভাব
আমাজনে সেতু না থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে সেখানকার প্রকৃতি, এমনটাই বলছেন কাফম্যান। আমাজনে সেতু তৈরি করার মতো সুবিধাজনক স্থানের অভাব রয়েছে। কারণ এর প্রবল স্রোত এবং স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা পলি মাটির কারণে নদীর দুই পাড়ের মাটি খুবই নরম অবস্থায় থাকে। সেই সঙ্গে কোনো কোনো স্থানে নদীর গভীরতা এতই বেশি, সেখানে সেতুর জন্য পিলার স্থাপন করা সম্ভবই না। আবার কোনোভাবে যদি পিলার স্থাপন করাও যায়, যে কোনো সময় নদীর তলদেশের নরম পলি সরে গিয়ে সেতু ধসে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
নদীর গতি-প্রকৃতি
আমাজনের আবহাওয়া সেতু তৈরির জন্য একেবারেই উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন ওয়ালটার কাফম্যান। তিনি বলেন, নদীর স্রোত যখন কম থাকে, অর্থাৎ জুন-নভেম্বর মাসে আমাজনের দুই পাড়ের মাঝের ব্যবধান থাকে সাড়ে তিন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার। আবার বর্ষায় মানে ডিসেম্বর-এপ্রিলে এই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ কিলোমিটার। আর এ সময় নদীর পানির উচ্চতা থাকে শুকনো সময়ের থেকে প্রায় ৫০ ফিট বেশি।
প্রযুক্তিগত ও আর্থিক জটিলতা
আমাজন নদীতে সেতু তৈরি করতে হলে দরকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর বিশাল অঙ্কের অর্থ—যার কোনোটাই ব্রাজিল, পেরু বা কলম্বিয়ার ক্ষেত্রে বহন করা সম্ভব নয়। আর কোনোভাবে যদি টাকা জোগাড় সম্ভবও হয়, তাও বিশাল সব ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমাজনের গহিন অরণ্যের ভেতর দিয়ে নদীর পাড়ে নেওয়া সম্ভব নয়।