মো. শাহীন
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইউক্রেন যুদ্ধে যদি রাশিয়া জিতত...

ইউক্রেন যুদ্ধে যদি রাশিয়া জিতত...

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে দেশটিতে ‘সামরিক অভিযান’ শুরু করে রুশ বাহিনী। তবে আক্রমণ শুরুর সময় যেসব কৌশলগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পুতিন দিয়েছিলেন, যুদ্ধের এক বছরেও তার কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেননি তিনি। এই যুদ্ধে রাশিয়া যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, কোনো যুক্তিতেই তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

তবে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন সংকট তৈরি করা এই যুদ্ধ যে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে সেটা বলাই যায়। কারণ ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিমা জোট রাশিয়াকে থামাতে একের পর এক ‘নিষেধাজ্ঞার তীর’ ছুড়লেও কোনো ফল হয়নি। শক্তি ও আক্রমণে অনেকটা দুর্বল হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অটল প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রাশিয়া যদি ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয়ী হতো সেক্ষেত্রে কী কী ঘটতে পারত তার একটা সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছেন সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করা এই কূটনীতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখার চেষ্টা করেছেন। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে এই যুদ্ধ নিয়ে নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।

তার দৃষ্টিতে, যদি রুশ বাহিনী এমন তাড়াহুড়ো করে আক্রমণ না করত; যদি ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ ধসে যেত; অথবা যদি পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে বিভ্রান্ত ও বিশৃঙ্খল হয়ে রাশিয়াকে মোকাবিলা করত, তাহলে কী ঘটত? সেক্ষেত্রে রুশ বিশেষ বাহিনী—সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রে দোসরদের সহায়তায়—কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এক বা দুদিনের মধ্যেই কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত এবং কিয়েভে পুতুল সরকার বসিয়ে বিজয়ী কুচকাওয়াজ করত রাশিয়া।

এ ছাড়াও হয়তো ইউক্রেনের সুষ্ঠুভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রুশ বিশেষ বাহিনী হত্যা করত কিংবা তাকে তড়িঘড়ি বিচারের মুখোমুখি করার পর কারাগারে পাঠানো হতো। অথবা জেলেনস্কি পালিয়ে ওয়ারশ বা অন্য কোনো স্থান থেকে নির্বাসিত সরকারের নেতৃত্ব দিতেন।

যুদ্ধ থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালানো ইউক্রেনীয় শরণার্থীর প্রবাহ বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি হতো। বর্তমানে ইউরোপ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে ইউক্রেনীয় শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়ে যেত; যার কাছে বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থী সংকট তুচ্ছ হয়ে দেখা দিত।

তার মতে, হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া কিয়েভের পুতুল সরকারকে কেউ স্বীকৃতি দিত না। ইউক্রেন কয়েকটি ফেডারেল জেলা হিসেবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে এ সরকারও সম্ভবত অস্তিত্বহীন হয়ে যেত। রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ইউক্রেন হারিয়ে যেত এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে রুশ সাম্রাজ্যবাদের অধীনে দেশটির যে মর্যাদা ছিল সেই অবস্থানেই হয়তো ফেরত যেত। এমনটাই পুতিন মডেল বলে মনে হয়। তারপরও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের নির্বাসিত সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া অব্যাহত রাখত। এ ছাড়া অনেকে হয়তো রুশ দখলদারদের বিরুদ্ধে কম-বেশি উন্মুক্ত সামরিক অভিযানে সহায়তাও দিত।

ইউক্রেনকে দখলে রাখতে রাশিয়ার গৃহীত পদক্ষেপও অত্যন্ত নৃশংস হবে। বুচা, ইরপিন ও অন্যান্য রুশ অধিকৃত শহরে যা ঘটছে—তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষকে তাড়াহুড়ো করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তাদের মধ্যে সম্ভবত অনেক ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, স্থানীয় কর্মকর্তা ও অন্যান্য মানুষ থাকতে পারে। এমনটা শুধু অনুমান নয়; রাশিয়া আগ্রাসন শুরুর আগেই ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দীর্ঘ তালিকা করে রেখেছে।

তিনি লিখেছেন, অন্যান্য হাজারো ইউক্রেনীয় নাগরিককে তথাকথিত ফিল্ট্রারেশন ক্যাম্পে পাঠানো হতে পারে যেখানে তারা রুশ বিশেষ বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও নৃশংস ব্যবহারের শিকার হতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে পুনঃশিক্ষার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য বিলুপ্ত করতে শিশুদের তাদের বাবা-মার কাছ থেকে পৃথক করে রাশিয়া পাঠানো হতে পারে। বর্তমানে রাশিয়ার অধিকৃত কয়েকটি অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকেই আমরা এমনটা জানি।

এমন পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সম্ভবত আরও ব্যাপক হবে। কেননা তখন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের পক্ষে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের অব্যাহত বাণিজ্যের পক্ষে সাফাই গাওয়া কঠিন হবে। তা ছাড়া ইউক্রেনকে দখলে রাখতে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ খরচও বাড়বে।

গত সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক আক্রমণ ব্যর্থ হলে বড় ধরনের সেনা জমায়েতের নির্দেশ দেন পুতিন। তিনি সম্ভাব্য বসন্তকালীন আক্রমণের জন্য অনেক জমায়েত করছেন। এমনকি সফল অভিযানের জন্য এটি প্রয়োজনও। ইউক্রেনীয়দের অব্যাহত প্রতিরোধের মুখে রাশান সেনাদের নৈতিক শক্তি ধরে রাখাও কঠিন হয়ে যাবে।

বাকি ইউরোপের জন্য—বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলো—রাশিয়ার এ আগ্রাসন সফল হলে মলডোভা, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর বিরুদ্ধে আরও আগ্রাসনের আসন্ন হুমকির সূচনা করবে। এসব দেশ সম্পূর্ণ যুদ্ধকালীন পর্যায়ে থাকবে এবং তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ইউরোপীয় বাহিনীর একটি বড় অংশ সেখানে স্থায়ীভাবে মোতায়েন করতে হবে। অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে পোল্যান্ড ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সীমান্তজুড়ে আশ্রয় নেবেন এবং সেখান থেকে তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবেন। সেক্ষেত্রে ইউরোপ আরও বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থাকবে।

সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনে নেওয়া পুতিনের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞানহীন। তার আগ্রাসনের যুদ্ধ কৌশলগতভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এমনকি এটি তার জন্য আরও অমঙ্গল বয়ে আনবে। তবে এটা আত্মতুষ্টি বা আত্মতৃপ্তির সময় নয়। যদি এ যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হয় তাহলে সম্ভাব্য প্রত্যেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে এটা চরম বিপর্যয় বয়ে আনবে।ইউরোপের নিরাপত্তা এবং আক্রমণাত্মক যুদ্ধ পরিহার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতি সুরক্ষায় ইউক্রেনের স্বাধীনতার জন্য অব্যাহত সহায়তা জরুরি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোস্তাফিজে মজেছেন পাথিরানা

ভারতে প্রথম দফায় রেকর্ড ভোটগ্রহণ

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ

আজকের নামাজের সময়সূচি

ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল

ডেমরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ফের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী, নীরব প্রশাসন

ভোটের তিন বছর পর কাউন্সিলর হচ্ছেন আলী আহাম্মদ

১০

পাবনায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা

১১

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইউপি সদস্যের মৃত্যু

১২

শুধু আ.লীগের লোকজন ভিজিএফ ও টিসিবি কার্ড পাবে

১৩

ছেড়ে গেছেন সন্তানরা, সংসার টানছেন ১০৭ বছরের বৃদ্ধা

১৪

৫ হাজার টাকায় স্ত্রীকে ‘মাদক কারবারির’ হাতে তুলে ‍দিলেন স্বামী

১৫

ব্যারিস্টার সুমনের খেলা দেখতে হাজারো মানুষের ভিড়

১৬

সাতক্ষীরায় এমপির গাড়িতে হামলা

১৭

জব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল

১৮

মতিঝিল আইডিয়ালের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত

১৯

খরুচে বোলিং মোস্তাফিজের, চেন্নাইয়ের হার

২০
*/ ?>
X