
আমাদের গোলাকার পৃথিবীর একদম তলদেশে অবস্থিত মহাদেশটির নাম অ্যান্টার্কটিকা। এটি একাধারে বিশ্বের শীতলতম এবং শুষ্কতম মহাদেশ। বিশ্বে বরফ হিসেবে জমাটবদ্ধ সুপেয় পানির শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই এই মহাদেশে অবস্থিত।
দুর্গম হওয়ায় তাই এই অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে গুজবের কোনো কমতি নেই। পাঠক, পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক এই লেখায় গুজবকে পাশ কাটিয়ে দুর্গম ও রহস্যময় অ্যান্টার্কটিকা সম্পর্কে জানাবো খাঁটি ও নিরেট তথ্য।
পৃথিবীর মহাদেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র অ্যান্টার্কটিকাতেই কোন স্থানীয়দের বসবাস নেই। তাই এখানে কোন জনপদ, জাতি বা রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। তবে এই মহাদেশটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে পরিচালিত হয়।
১৯৫৯ সালে ১২টি দেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যাতে বর্তমানে ৪৬টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকায় সামরিক কর্মকাণ্ড এবং খনিজ সম্পদ খনন নিষিদ্ধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সহায়তা এবং মহাদেশটির ইকোজোন সুরক্ষিত করা হয়েছে।
অ্যান্টার্কটিকার ৭০টি ঘাঁটিতে (৪০টি সারা বছর জুড়ে ও ৩০টি শুধু গ্রীষ্মকালে) ত্রিশ দেশের বিজ্ঞানী ও কর্মচারী বসবাস করেন। আনুমানিক জনসংখ্যা গ্রীষ্মকালে ৪ হাজার ও শীতকালে ১ হাজার জন। এ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকায় অন্তত ১১টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে।
জীববিজ্ঞানী, ভূ-তত্ত্ববিদ, সমুদ্র বিশেষজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী, হিমবাহু বিশেষজ্ঞ এবং গ্রহাণু বিশেষজ্ঞরা ওই ঘাঁটিগুলোতে অবস্থান করে তাদের গবেষণার কাজ চালিয়ে যান। ঘাঁটির অভ্যন্তরে তাদের জন্য চার থেকে ছয় মাসের খাবার একত্রে এনে রাখা হয়।
কারণ, টানা ৬ মাস শীত থাকা মহাদেশটিতে সূর্যের দেখাও পাওয়া যায় না বছরের অর্ধেক। সেসময় পৃথিবীর বাকি অংশের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না অ্যান্টার্কটিকা। শীতের প্রকোপ এতটাই থাকে যে বিমানও সেখানে বিকল হয়ে যায়।
এখন পর্যন্ত এই মহাদেশে ধারণ করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই রুশ গবেষণা কেন্দ্র ভস্তকে এই তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়। তবে সাধারণত এই মহাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৮০ ডিগ্রির কাছাকাছি।
বিপরীতে গ্রীষ্মকালে এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫-১৫ ডিগ্রি সেলসায়াস পর্যন্ত ওঠে থাকে। তবে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এখানকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সর্বোচ্চ ২০.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
পাঠক, অ্যান্টার্কটিকায় কোনো স্থানীয় বাসিন্দা (মানুষ) নেই, সেই তথ্য আপনাদের ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। কিন্তু সেখানকার ভয়াবহ পরিবেশেও ঠিকই মানিয়ে নিয়েছে কিছু প্রাণী। আগামী ও শেষ পর্বে আমরা তাদের কথাই জানবো।