
লিজ এনজু একজন কেনিয়ান মনোবিদ, যিনি তার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। সবেমাত্র তিনি দলের প্রাথমিক নির্বাচনে ভোটের জন্য পৌঁছেছেন, আর তখনই বিরোধীরা আক্রমণ চালায় তার ওপর। আক্রমণকারীরা এনজুর চুল ধরে টান দেয় এবং তার ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলে। এরপর তিনি তার ব্যালট কাস্ট না করেই পালান এবং প্রতিযোগিতায় হেরে যান।
কেনিয়ার মহিলা সংসদীয় সমিতির মতে, ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি, আইনসভা এবং স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারের সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া কয়েক ডজন নারী প্রার্থীদের মধ্যে এনজু একজন।
সমিতির প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী মার্সি মওয়াঙ্গি বলেন, এ ধরনের সহিংসতা সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নারী ব্যতীত সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখে। বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রেই কোনো রিপোর্ট করা হয় না।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনজু তার ওপর হামলার ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছেন, কিন্তু কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশের মুখপাত্র ব্রুনো ইশোহি বলেন, এনজুর মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়নি, সেটি চলমান আছে।
যদিও এটি পরিষ্কার নয় যে হামলার ঘটনাগুলো কারা ঘটাচ্ছে। তবে নারী প্রার্থীদের ধারণা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরাই এর নেপথ্যে রয়েছেন। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ নয়। নাইরোবি মহিলা হাসপাতালের জেন্ডার ভায়োলেন্স রিকভারি সেন্টারের তথ্য অনুসারে, কেনিয়ার প্রায় অর্ধেক নারী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন।
নারী প্রার্থীরা বলছেন, তারা ক্রমাগত হুমকির মধ্যে রয়েছেন। সাবেক যৌনকর্মী ম্যারি মুগুরে বলেন, এ বছর একটি প্রাদেশিক পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তাকে ফোনে কল করে হুমকি দেওয়া হয়। নভেম্বরে একদিন তিনি যখন রাস্তায় হাঁটছিলেন তখন একটি মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন লোক তার ওপর হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ‘এটা ছিল শুধু আমাকে ভয় দেখানোর জন্য, আমাকে পদত্যাগ করার জন্য।’ তবে তিনি প্রচারণা চালিয়ে গেলেও মনোনয়ন হারান।
২০২০ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে একটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা এক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- যে কোনও লিঙ্গের নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি থাকা উচিত নয়। যেটি নারীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
কোটা কখনো পূরণ হয়নি। ৩৪৯ সদস্যের নিম্নকক্ষে ৭৫ জন নারী রয়েছেন, যার মধ্যে বিশেষভাবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৪৭টি আসন রয়েছে। উচ্চকক্ষে প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী। আর ৪৭ কাউন্টি গভর্নরের মধ্যে মাত্র তিনজন নারী।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো নারী এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেননি। যদিও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সামনের সারিতে থাকা রাইলা ওডিঙ্গার একজন নারী রানিংমেট রয়েছেন।