ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে পূর্ব ঘোষিত মশাল মিছিল করেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের নেতৃত্বে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন তারা।
এ সময় অবিলম্বে ভাতা বৃদ্ধির আদেশ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
আন্দোলনকারী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব চিকিৎসক তাদের কোর্সের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে নানা সেবা দিয়ে থাকেন। সকাল ও রাতের ডিউটি মিলিয়ে সপ্তাহে তাদের কর্মঘণ্টা ৬০ থেকে ৭২ ঘণ্টার বেশি। এই হিসাবে ঘণ্টাপ্রতি এসব চিকিৎসকদের উপার্জন মাত্র ১০৫ টাকা। অভাব ও দৈন্যতায় যাদের দিন কাটে, মেধার বিকাশ ঘটিয়ে ভালো বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন সেখানে বিলাসিতা।
তারা আরও বলেন, সরকারি মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতলে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার জন্য তাদের এসব ডিউটি করতে হয়। কিন্তু এর বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে সামান্য অর্থ। তা ছাড়া বাইরে প্র্যাকটিস করাও নিয়ম করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা আরও বলেন, ভারতে প্রদেশভেদে ট্রেইনি চিকিৎসকরা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার, পাকিস্তানে প্রায় ৭০ হাজার এবং ভুটানে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পারিতোষিক পেয়ে থাকেন। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সেটাও অনিয়মিত।
ভালো বিশেষজ্ঞ তৈরিতে ভালো বিনিয়োগ করতে হবে জানিয়ে তারা বলেন, বিনিয়োগ না করলে ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হবে কীভাবে? এর ফলে ২০২৪ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যয় হয়েছে ৫০০ মিলয়ন ডলার। ২৫ লাখ রোগী প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভালো সেবা নিতে ভারত চলে যায়। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এতো বড় বাজেটের ২ শতাংশও কী ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে বিনিয়োগ করা যায় না? প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম পোস্ট গ্রাজুয়েট বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অতিদ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা সময়ের দাবি।
তারা আরও বলেন, গত চার মাস ধরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান সহকারীদের সঙ্গে দেখা করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ফাইলটি আটকে আছে এক মাস হলো। সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্নয়ক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সভা করে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে মশাল মিছিলসহ ৪টি কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। একই দাবিতে আগামী ১৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকল মেডিকেল কলেজে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবেন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা।
মন্তব্য করুন