
২০১৬ সালে ব্লকবাস্টার হিট হয় শাকিব খানের অভিনীত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘শিকারি’। এরপরই টিজার বের হয় বাংলাদেশের কিং খান খ্যাত শাকিব খানের আরেকটি সিনেমা ‘অপারেশন অগ্নিপথ’।
আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটির শুটিং ২০১৭ সালে শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। তবে মাস ছয়েক আগে এক প্রবাসী সাংবাদিক ফেসবুকে পোস্ট দেন, অস্ট্রেলিয়ায় একটি ছবির শুটিংয়ের সময় এক সহপ্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন শাকিব খান। তিনি লেখেন, সামাজিক চাপে নির্যাতনের শিকার ওই নারী প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান শাকিব।
তবে এ ঘটনায় নতুন করে ঘি ঢাললেন অপারেশন অগ্নিপথ সিনেমার আরেক প্রযোজক। বুধবার ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি এই প্রযোজক নিজেই এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেসময় শাকিব খানকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো। আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। এসব যৌনকর্মীদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দিতে হতো প্রযোজকদের।
তিনি আরও জানান, এ সিনেমার এক সহপ্রযোজককে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। ভুক্তভোগী ওই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। তখন এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন নির্যাতিতা।
এ সম্পর্কে প্রযোজক রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, শাকিব খানের মতো এত বড় তারকার চরিত্র এত নোংরা, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তার সম্পর্কে অনেক দালিলিক প্রমাণ আছে। শাকিব খান যদি তার আর্থিক ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে পর্যায়ক্রমে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রযোজক একটি তালিকাও দিয়েছেন, যেখানে ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় শাকিব খান যেসব ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে :
১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।
২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন, হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্য। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছামতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো, অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্য অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুএক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সবার বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।
৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সব যৌনকর্মীদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক আমাদেরই দিতে হতো।
৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহপ্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার শিকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে আসেন বাংলাদেশে।
এতদিন পরে কেন এইসব অভিযোগ, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রযোজক রহমত উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, ‘এতদিন আসায় ছিলাম, কাজটা শেষ করতে পারব। কিন্তু এত বছর অপেক্ষা করেও যখন ছবিটি বানাতে পারছি না, তখন অভিযোগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’