সিনেমার শেষ সিন। টেলিভিশনের সামনে বসা ছোট-বড় সব বয়সের দর্শক। পর্দায় দেখা যাচ্ছে ভিলেন তার জনা-ত্রিশেক সঙ্গী নিয়ে নায়কের পরিবার ও তার প্রেমিকাকে একটি পরিত্যক্ত এলাকায় জিম্মি করে রেখেছে। জিম্মি হওয়া সবার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ। উপরওয়ালাকে স্মরণ করছে বারবার। এরমধ্যেই পর্দা কাঁপিয়ে কে যেন হাজির হয়ে শূন্যে দুই পা উঠিয়ে ভিলেনের দুজন সঙ্গীর থুতনি ভঁচকে দিল! এরপর সমানতালে চলল ফাইট! গতানুগতিক ঢিসুম-ঢিসুম না, চমৎকার সব মার্শাল আর্ট স্টান্ট দেখিয়ে এক নিমিষেই সবাইকে কুপোকাত!
আশি-নব্বইয়ের দশকে অ্যাকশন ছবির জয়জয়কার ছিল ঢাকাই সিনেমাতে। নায়ক জসীমের হাত ধরে সিনেমার অ্যাকশনে এসেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই বদলের পালে নতুন হাওয়া এনে দিয়েছিলেন মাসুম পারভেজ, যাকে সবাই রুবেল নামে চেনেন।
চলচ্চিত্রে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন কুংফু-কারাতের নান্দনিক সব কৌশল নিয়ে। বিশেষত রুবেলের সিনেমাগুলোর প্রতি তরুণ দর্শকের আগ্রহ ছিল দারুণ। তার ছবি হলে এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়তেন দর্শক। কারণ রুবেলের কুংফু দেখার আনন্দটা মিস করতে চাইতেন না কেউ। শুধু সিনেমা হলে নয়, পাড়ার চায়ের দোকান বা বাড়িতে, সিনেমা শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে থেকেই ভিড় করতেন সিনেপ্রেমিরা।
রুবেলের বেশির ভাগ ছবিই ছিল ব্যবসা সফল। অনেকেই এই নায়ককে ঢাকাই ছবির ব্রুস লি মনে করতেন। কারণ তাকে দেখে দর্শক ব্রুস লির সিনেমার মারামারির মতো উপভোগ করত, যিনি বন্দুক বা কোনো অস্ত্র ছাড়াই শত্রুদের ঘায়েল করতেন।
১৯৬০ সালের ৩ মে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘লড়াকু’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে তার। প্রায় ৩০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন রুবেল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই নায়ক অভিনয় করেছেন দুই বাংলার প্রায় ৫০ জন নায়িকার সঙ্গে। ৯০ দশকের একেবারে শেষের দিকে রুবেল নিজে প্রযোজনা ও পরিচালনায় শুরু করেন।
রুবেলের প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হচ্ছে, বিচ্ছু বাহিনী, মায়ের জন্য যুদ্ধ, প্রবেশ নিষেধ, বাঘে বাঘে লড়াই, টর্নেডো কামাল, বিষাক্ত চোখ, রক্তপিপাসা, অন্ধকারে চিতা ইত্যাদি। রুবেল একজন সফল অভিনেতাই নন, পাশাপাশি ফাইট ডিরেক্টর হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
তার সবগুলো ছবিতেই ‘দ্যা একশন ও্যারিয়রস’ নামে নিজস্ব ফাইটিং গ্রুপ ছিল। বলতে গেলে সেই সময়ে বাংলাদেশে মার্শাল আর্টকে জনপ্রিয় করে তোলেন রুবেল, যে কারণে তখন অনেক কিশোর তরুণ মার্শাল আর্ট শিখতে উৎসাহী হয়।
রুবেল তার বিভিন্ন ছবিতে মার্শাল আর্টয়ের ভিন্ন ভিন্ন নতুন কলাকৌশল উপস্থাপন করতেন। যেগুলোর মধ্য ‘ড্রাংকিং কংফু’ (শত্রু সাবধান), উইপিং কংফু (বাঘের থাবা), ড্যান্সিং কংফু (ভণ্ড), ব্লাইনড কংফু (চারিদিকে শত্রু) সহ দুর্দান্ত সব কলাকৌশল উপস্থাপন করেন।
মন্তব্য করুন