পরিচালকের খামখেয়ালিপনায় রাশিয়ায় খেলতে যাওয়া অনিশ্চিত ঢাবি দলের

শাহজাহান আলী।
শাহজাহান আলী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালক মো. শাহজাহান আলীর খামখেয়ালিপনায় ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে খেলতে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, খেলায়াড় ও কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মধ্য রাশিয়ার একটি শহর ইয়েকাতেরিনবুর্গ। এ শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল-২০২৩। এ স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে বিশ্বের অনেক দেশ অংশ নিচ্ছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তবে খেলোয়াড়দের স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে পাঠাতে অনীহার অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার জন্য চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাবিকে ই-মেইলে জানায় আয়োজক কমিটি। এ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে সব খরচ ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ দিলেও বিমানভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হবে বলে জানানো হয়। বিষয়টি শাহজাহান আলীকে জানালে তিনি শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং করেন। মিটিংয়ে ঢাবি খেলায় অংশ নিবে বলে জানানো হয়। সে লক্ষ্যে কতজন খেলোয়াড় খেলবে ও তাদের সঙ্গে কোন কোন কর্মকর্তা যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলোয়াড় পছন্দ করতে বলা হয়। পরে বিমানভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ঢাবির কাছে প্রায় ১১ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ফাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের দপ্তরে জমা দেওয়া হলেও ফাইলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের তালিকা ছিল না। পরে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের তালিকাসহ ফাইল জমা দিতে বলা হলে খামখেয়ালিপনা শুরু করেন শাহজাহান আলী।

এদিকে স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে তথ্য না দেওয়ায় গত ২১ এপ্রিল ফের ই-মেইল পাঠায় ফেস্টিভ্যাল আয়োজক কমিটি। আগের মেইলে বিমান ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহন করার কথা বলা হলেও এ মেইলে বিমান ভাড়া আয়োজক কমিটি বহন করবে বলে জানানো হয়। ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার জন্য ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়। এ মেইলের বিষয়ে শাহজাহান আলীকে অবগত করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায়াড়রা বিষয়টি জানতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষার্থীদের কথা শুনে কোষাধ্যক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন গত ২৩ মে ফের মেইল করা হয়েছে এবং ২৬ মের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়টি জানার পর বুধবার শাহজাহান আলীর কাছে যাওয়ার প্রস্তুতির বিষয়ে তথ্য চান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। পরে ওইদিন বিকালে

তথ্য দেন শাহজাহান আলী। তিনি ওই তথ্যে উল্লেখ্য করেন—বর্তমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়া সমীচীন হবে না এবং ঢাবিতে আন্তর্জাতিকমানের কোনো খেলোয়াড় নেই।

খেলোয়াড়দের অভিযোগ, ঢাবির মধ্যে অনেক খেলায় খেলোয়াড়ের গোল্ড মেডেল থাকার পরেও আন্তর্জাতিক মানের কোনো খেলোয়াড় নেই বলে উল্লেখ করেছেন শাহজাহান আলী। অথচ একই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি কয়েক মাস আগে বিমানভাড়া বাবদ প্রায় ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে এক খেলোয়াড় কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিকমানের খেলোয়াড় বর্তমানে রয়েছে। তাদের ফলাফলও আমরা প্রতিবছর পাচ্ছি। তাহলে উনি কীভাবে বলতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিকমানের খেলোয়াড় নেই?

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার পরপরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেছিল। বুয়েট তাদের দল নিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল যদিও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বুয়েট থেকে অনেক ভালো ফর্মে ছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো তথ্যই আমরা পাইনি।

শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, খেলোয়াড়দের খেলার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেন শাহজাহান আলী। তিনি খেলায়াড়দের খেলায় আগ্রহ না দেখিয়ে সরকারি চাকরিতে আগ্রহ দেখাতে বলেন। তিনি নিজেও খেলাধুলাসংক্রান্ত কাজের চেয়ে বৃক্ষ রোপণসংক্রান্ত কাজে আগ্রহ দেখান বেশি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, উনি খেলোয়াড়দের খেলাধুলায় অনুৎসাহিত করে বিসিএস দিতে বলেন। মেয়েদের বলেন খেলাধুলা করলে বাচ্চা নিতে সমস্যা হবে। তিনি খেলাধুলার টাকা বাঁচিয়ে গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি রাশিয়ার খেলতে যেতে না পারে তাহলে দায়ী শাহজাহান আলী। আমরা ওনার খামখেয়ালির ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।

এ বিষয়ে শাহজাহান আলী কালবেলাকে বলেন, চিঠি আসার পর আমাদের উপদেষ্টা স্যার অসুস্থ ছিল। পরে সিনেট নির্বাচন চলে এলো। আমি ওনাকে বলেছিলাম, উনি বললেন—উনি দেখবেন। গতকাল কোষাধ্যক্ষ আমাদের বলেছেন। আমরা এখনো খেলোয়াড় পাঠাতে পারব।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘটনা জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মাসখানেক আগে শাহাজান আলী একটি বিশাল বাজেট দিয়ে আমাদের কাছে ফাইল পাঠিয়েছেন। পরে আয়োজক কমিটি আমাদের একটি অফার দিয়েছে, আমাদের কোনো খরচ লাগবে না। সেটাও ওনার কাছে গত মাসে গেছে। গতকালকে শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আসছে। আমি শিক্ষার্থীদের কথা শুনে অবাক। আমি ওনাকে ফোন দিয়ে বলেছি, আপনি এতদিন এই ফাইলটি ধরে রাখতে পারেন কিনা। এ সময় তিনি অজুহাত দেখিয়েছেন।

পরে তিনি আমাদের কাছে একটি ফাইল পাঠিয়েছেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো যোগ্য খেলোয়াড় নেই। অথচ এর আগে তিনি ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাবে কিনা শেষ সিদ্ধান্ত তো উনি নিতে পারেন না। উনি এমনভাবে লিখেছেন এখানে যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। তারপরও বিষয়টি আমি স্পোর্টস বোর্ডের চেয়ারম্যান সামাদ সাহেবকে জানিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সামাদ কালবেলাকে বলেন, আমি অফিসে গিয়ে ফাইল দেখে শিক্ষার্থীরা যেন যেতে পারে সে ব্যবস্থাই করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি পরিচালক শাজাহান সাহেবকে ডাকব কী কারণে এমন হয়েছে। ওরা যেহেতু খরচ দিবে আমি বলেছিলাম একটি দল পাঠাতে। জিতুক বা না জিতুক আমাদের অংশগ্রহণটিই বড়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com