বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৪ শতাংশ কিশোরী যৌন নিপীড়নের শিকার : গবেষণা

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৪ শতাংশ কিশোরী যৌন নিপীড়নের শিকার : গবেষণা

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৬ শতাংশ কিশোর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণায় এ তথ্য ওঠে আসে।

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ গবেষণা দিবস পালন অনুষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গবেষণা পোস্টারিং, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, মিট দ্য প্রেস ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এমপি।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণার ধারা অব্যাহত না রাখতে পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে। তরুণ চিকিৎসকরা গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিক দিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের ডা. মারিয়াম সালওয়া তার বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনলাইন যৌন নির্যাতন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সমকালীন মিশ্র পদ্ধতির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৬ শতাংশ কিশোর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড়গুণেরও বেশি। আবার যেসব শিশু ইলেকট্রনিকস ডিভাইস বেশি ব্যবহার করে এবং যারা ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুমের মতো যোগাযোগ মাধ্যম বেশি ব্যবহার করে তাদের অনলাইন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের ৫০ শতাংশের বেশি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে জানে না। ইন্টারনেটের অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক জ্ঞানকে অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতনের মূল কারণ।

তিনি আরও বলেন, গবেষণাকালে শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনটি বিষয় প্রতীয়মাণ হয়েছে। প্রথমত, ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ে বাবা-মায়ের জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের অভাব। দ্বিতীয়ত, যৌন নির্যাতন সম্পর্কিত ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা এবং পরিণতি সম্পর্কে ধারণার অভাব এবং তৃতীয়ত, যৌন নির্যাতনের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক এম আতিকুল হক বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা সংক্রান্ত গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার প্রাদুর্ভাব ছিল ৪৮ শতাংশ এবং মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এই সমীক্ষাটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার উচ্চ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার যথাযথ তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ঘটনা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ তার বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামীণ জনসংখ্যার মধ্যে করোনারি হার্টের রোগের ব্যাপকতা এবং ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে তুলনা সংক্রান্ত গবেষণা উপস্থাপন করেন।

তিনি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রাদুর্ভাব শহুরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং শহুরে এলাকায় ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গ্রামীণ এবং শহরের জনসংখ্যার মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের ব্যাপকতার উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল। সিস্টোলিক রক্তচাপের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক গ্লুকোজ প্রোফাইল, কোমর-নিতম্বের ঘেরের অনুপাত এবং এলডিএল কোলেস্টেরল এবং শহরে জনসংখ্যার কায়িক পরিশ্রমহীন জীবনধারার কারণ গবেষণায় ওঠে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। শুধু ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারলে বছরে এক লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। বিএসএমএমইউয়ে গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে উপাচার্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, চিকিৎসকদের মাঝে গবেষণা করার জন্য আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে নতুন জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের চাহিদা পূরণে গবেষণা খাতে বছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। ইতিমধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ পাঁচগুণ বৃদ্ধি করে ৪ কোটি থেকে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গবেষণা কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য চলতি শিক্ষাবর্ষে এই প্রথম একসঙ্গে ২৪ গবেষক চিকিৎসককে পিএইচডি কোর্সে এনরোলমেন্ট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদানকৃত সমন্বিত গবেষণা পুরস্কারের ২০ শতাংশ বিএসএমএমইউ’র শিক্ষক, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা অর্জন করেছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগম, বিএমআরসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন. বিএসএমএমইউ’র উপউপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার চিপকেও ব্যর্থ মোস্তাফিজ

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর

চাঁদপুরে টাউন হল মার্কেটে আগুন

টি-২০ খেলতে সিলেটে ভারত নারী ক্রিকেট দল

সুদের ওপর কর অব্যাহতি পেল অফশোর ব্যাংকিং

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বাচসাস’র নিন্দা

চবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ায় শাহবাগ থানায় জিডি

পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

১০

আদাবরে স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

১১

ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক

১২

অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি, বিপাকে পুলিশ কনস্টেবল

১৩

গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৩

১৪

একাধিক অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল, কে এই তরুণী

১৫

‘পরকীয়ার জেরে’ হত্যা করা হয় মিতুকে : মা

১৬

গাজার সেই শহরে আবারও নারকীয় হামলার ঘোষণা

১৭

রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদে 

১৮

যেসব জেলায় শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা

১৯

‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার’

২০
*/ ?>
X