
অছাত্রকে আবাসিক হলে রাখতে চারজন বৈধ শিক্ষার্থীকে মারধর ও হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া বিষয়টি লিখিত আকারে হল প্রশাসনকে জানানো হবে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, ঢাবির সূর্য সেন হলের ৫৩২ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের মধ্যে একজন সুমন আহমেদ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১৩-১৪ সেশনের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের এলাকার বড় ভাই হিসেবে পরিচিত এবং ওই রুমে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে রুমের অন্য সদস্যদের নানাভাবে হয়রানি করেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে সুমন আহমেদের সিটে অন্য একজন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারীরা। আর এতেই ক্ষেপে যান সুমন আহমেদ ও সিয়াম রহমান। পরে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল আহাদের মাধ্যমে ওই রুমে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডাকেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান। এর পর থেকে চলতে থাকে বেধড়ক মারধর। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল পরীক্ষা করেন তিনি। মোবাইলে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় রাত ৮টা পর্যন্ত ওই রুমে তাদের আটকে রাখা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাত-পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের ছাড়া হয়নি। পরে ভুক্তভোগীরা আর ছাত্রলীগ করবে না এবং ওই হলে আর অবস্থান করবে না এমন শর্তে আলাদা মুচলেকা নিয়ে তাদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লুতফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন, আরবি বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।
এ ছাড়া এ ঘটনায় মারধরের সময় সিয়াম ও সুমনের সঙ্গে ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, আবদুল আহাদ, উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগীদের মারধরের উস্কানি দিলেও সিয়াম ও হামিদ মারধর করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলম বাদশা কালবেলাকে বলেন, আহাদ নামের একজনকে দিয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম তার রুমে আমাদের ডেকে নিয়ে যান। তিনি ওই রুমে আমাদের ফোন চেক করেন। আমরা ছাত্রলীগবিরোধী কিনা, অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা চেক করেন। কিন্তু তিনি আমাদের ফোনে কোনো কিছুই পাননি। কিছু না পেয়ে তিনি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমাদের মারধর করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের রুমে নতুন শিক্ষার্থী ওঠা নিয়ে মূলত ঝামেলা। তিনি সুমন আহমেদকে হলে রাখতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু অন্য একজন শিক্ষার্থী আমাদের রুমে ওঠায় তিনি ক্ষেপে যান। তিনি তার জুনিয়রকে দিয়ে যে শিক্ষার্থী উঠেছে, সেই শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা সেটি করিনি। যার কারণে তিনি আমাদের মারধর করেছেন। আমাদের মারধর করার পর মুচলেকা নিয়ে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। মুচলেকায় তিনি আমাদের জোর করে লিখতে বাধ্য করেছেন যে আমরা রুমের সিনিয়র ভাইকে জোর করে বের করে দিয়েছি এবং ছাত্রলীগ করব না ও হলে থাকব না। অথচ আমরা ছাত্রলীগের কর্মী। আমরা নিরপরাধ হওয়ার পরও আমাদেরকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হামিদ কারজাই। তিনি কালবেলাকে বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অনেকে বলে, তারা নাকি সরকারকে নিয়ে ট্রল করে। তবে আমি এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কারণ, তারা আমার গ্রুপে রাজনীতি করে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামসহ বাকিদের ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভুঁইয়া কালবেলাকে বলেন, আমি গতকাল রাতে বিষয়টি শোনার পর খোঁজ নিয়েছি। শুনেছি, একটি রুম দখল নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। মারধরের বিষয়টি জানি না। কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।