কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২, ১১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবি শিক্ষার্থীর সংগ্রাম : ঝালমুড়িতে জোটে ভাত, চলে পাঠ

কুবি শিক্ষার্থীর সংগ্রাম : ঝালমুড়িতে জোটে ভাত, চলে পাঠ

ক্লাস শেষ হওয়ার পর বন্ধু-সহপাঠীদের অনেকেই যখন আড্ডায় মাতেন, ঘুরে বেড়ান; তখন আব্বাসউদ্দীনকে দেখা যায় ক্যাম্পাসেরই কোনো একটি রাস্তার পাশে ঝালমুড়ির পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কারণ মায়ের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে এবং নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে উপার্জন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে তার জন্য।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্বাসউদ্দীন এভাবেই তার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। মাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের পাশেই ছোট একটি বাসায় থাকেন আব্বাস। বড় ভাই আক্কাস ও বোন ফাতেমা বিয়ে করে পৃথক। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট আব্বাস। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামে।

আব্বাস যখন নবম শ্রেণিতে, তখনই পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। কিশোর বয়সে তার বাবা মারা যান। পরে বড় ভাইয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে সংসার চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও করোনার সময়ে বন্ধ হয়ে যায় ভাইয়ের ব্যবসা। এরপর নানা সময়ে নানা কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে আব্বাসকে। তবে পড়ালেখাটা ছাড়েননি।

আব্বাস বলেন, ‘ক্লাস শেষ হওয়ার পর যতটুকু সময় পাই ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বেচাকেনা শেষ করে বাসায় যেতে প্রায় রাত ১০টা বেজে যায়। সারাদিনের ক্লান্তিতে সহজে ঘুম চলে আসে। তবে রাত ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টা করি।’

আব্বাস জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কয়েকটি মেধাবৃত্তি পেলেও শর্তসাপেক্ষ হওয়ায় নিতে পারেনি।

ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) প্রস্তুতির পাশাপাশি বিদেশে পড়তে চান আব্বাস। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে পড়লে বিসিএসের পাশাপাশি বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রায় ১৬টি ডিগ্রির সুযোগ রয়েছে। ফ্রি অথবা ৫০ শতাংশ স্কলারশিপের সুযোগ পেলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিদেশে চলে যাব। তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। নিজস্ব সম্পত্তি না থাকায় এখন থেকেই কিছু একটা করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তা ছাড়া পরিবারে আয় করার মতো মানুষ নেই। আমি কার ওপর নির্ভর করব। জন্ম থেকেই পরিবারের যতটুকু সামর্থ্য ছিল ততটুকু দিয়ে বড় করেছেন। এখনো পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকাটা নিজের কাছে বোঝা মনে হচ্ছে।’

আব্বাসের মা শাহানারা বেগম বলেন, ‘পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতেই আমার ছেলে ঝালমুড়ির দোকান দিয়েছে। ছেলে সারাদিন খাটাখাটনি করে যতটুকু উপার্জন করেন তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়-ঝাপটায় নানা সমস্যা পোহাতে হয় তার। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে হলে আরও নিরাপদ ও সুবিধা হতো।’

আব্বাস বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট বসার মতো কোথাও জায়গা পাচ্ছি না, যার কারণে যখন যেখানে জায়গা পাই সেখানে বসে দোকান চালিয়ে নিই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে ব্যবসার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিতে সহজ হতো।’

আব্বাসের ঝালমুড়ি খেতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে শিক্ষার্থীদের। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এভাবে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারে সেটাই কল্পনাতীত। তার জীবন সংগ্রামের অদম্য সাহস আমাদের মুগ্ধ করছে। তার ঝালমুড়ি কেমন হচ্ছে সেটি বিষয় নয়, সে আমাদের ক্যাম্পাসের। এজন্যই খেতে আসা।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহ. আমিনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি, তার নাম আমাদের নোটবুকে আছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগের ম্যাচে খরুচে বোলিংয়ের পরও একাদশে মোস্তাফিজ 

অসুস্থ নেতার পাশে মহানগর বিএনপি

ট্রাফিক সদস্যদের বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন দিচ্ছে ডিএমপি কমিশনার

চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

নির্বাচন করবেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী, আলোচনায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বাড়ি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পথে আইসিসি

মরা মুরগির ঘিলা-কলিজা বিক্রি করেই কোটিপতি সুজন

চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনে ঝুলছিল নারীর মরদেহ

‘মধ্যপ্রাচ্যে শেখ হাসিনার মতো নেত্রী থাকলে গাজায় এমন পরিস্থিতি হতো না’

সাইকেল হয়ে গেল মোটরসাইকেল!

১০

বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালু করল রাকাব

১১

রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় নিহত ৩

১২

শহরে কৃষক লীগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না : কাদের 

১৩

মার্কিন মুলুকে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঙ্কার

১৪

বান্দরবানের সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি

১৫

পাবনা কারাগারে কয়েদির মৃত্যু

১৬

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৭

ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা / মাইক্রোবাস-মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে নিহত দুই

১৮

নৌপথে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাসদস্যদের ফেরত পাঠাবে বাংলাদেশ

১৯

তীব্র দাবদাহে রাজশাহীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

২০
*/ ?>
X