কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৫১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবিতে তদন্ত ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার

কুবিতে তদন্ত ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করার পর তৎপর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শৃঙ্খলা বিধি না থাকার পরও ‘উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী’ বহিষ্কার করায় এ ব্যবস্থা পদ্ধতি ও ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম। তাদের জবাব আমাদের কাছে যথাযথ মনে না হওয়ায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তখন হয় সাময়িক বহিষ্কার উঠে যাবে, না হয় স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই কেবল তার উপশম ঘটাতে তৎক্ষণাৎ সাময়িক বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন যদি না থাকে, তাহলে ঘটনার এক মাস পর এসে সাময়িক বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা করবে যে কেউই।

গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী সমর্থিত কয়েকজন কর্মী ও সাবেক ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ‘অবৈধভাবে’ উঠতে গেলে তাদের বাধা দেন তৎকালীন সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সমর্থিতরা। এ সময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের সঙ্গে ইলিয়াস সমর্থিত এনায়েত ও সালমানের বাগ্‌বিতণ্ডা ঘটে এবং উভয় পক্ষকেই উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। এ ঘটনাকে প্রক্টরিয়াল বডির কর্তব্য পালনে বাধা, শিক্ষককে হেনস্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ দাবি করে উভয় নেতাকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের বিপরীতে এনায়েত ও সালমানের উত্তর গ্রহণযোগ্য হয়নি দাবি করে ‘প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী’ উভয় ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে।

কারণ দর্শানোর ওই নোটিশের পর সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর পাল্টা অভিযোগ দেন উভয় নেতা।

অভিযোগপত্রে তারা বলেন, ২০১৬ সালে কুবি ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে নিহত কাজী নজরুল ইসলাম হলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত খুনি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজন অছাত্র হলে ওঠার চেষ্টা করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভীতি সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষক অমিত দত্ত অছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য ও তাদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন। এ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে সেই শিক্ষক তাদের মারতে তেড়ে আসেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তারা।

একই ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে অভিযোগ গেলেও কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করেনি কর্তৃপক্ষ। বরং নিজেদের মতো করেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেষ্টা করেও প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি; বরং অভিযোগকারী তথা প্রক্টরিয়াল বডির সুপারিশের ভিত্তিতেই উভয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপাচার্যপন্থি একজন শিক্ষক বলেন, মূলত অভিযোগকারী শিক্ষকরাই তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল। উপাচার্য তাদের বাইরে যেতে পারেননি। সে জন্য বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সঙ্গে। বিষয়টি প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এবং উপাচার্যের বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কায় দুজনই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাদের একজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কোনো শৃঙ্খলা বিধিও নেই। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? তারা কোন মাত্রার অপরাধ করেছে, সেটা কীভাবে নির্ণয় করা হয়েছে—এ প্রশ্নগুলো সামনে আসা জরুরি।

তবে উপাচার্য বলেন, ঘটনা ঘটার পর আমি বিদেশ চলে যাই। আমরা গত রবি-সোমবারের দিকে তাদের বহিষ্কারের বিষয়ে মিটিংয়ে বসার কথা ছিল এবং সেদিনই বহিষ্কার করার কথা ছিল। কিন্তু তারা কীভাবে যেন জানতে পারে যে আমরা তাদের বহিষ্কার করব এবং তাদের যাতে বহিষ্কার করা না হয়, সে জন্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপগ্রেডেশন বোর্ড চলাকালীন হামলা চালায়। এরপর তারা মাফ চাইবে বলেছিল, কিন্তু মাফ চায়নি।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোন বিধি অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে? এর উত্তরে উপাচার্য বলেন, প্রক্টরের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান কি শৃঙ্খলাবিরোধী না? গত সিন্ডিকেটে শৃঙ্খলা বিধির বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী সিন্ডিকেটে আমরা সেটি পাস করাব।

একই ঘটনায় অভিযোগকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ আছে। তার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই একপাক্ষিক ব্যবস্থা নিতে পারেন কি না- এ বিষয়ে উপাচার্যকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রতিবেদককে অনেকক্ষণ সময় দিয়েছেন দাবি করে আর মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সার্বিক বিষয়ে কথা হয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমানের সাথে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের একজন এবং দু’বার প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বলেন, প্রশাসন নিজ থেকে কখনো এ ধরনের শাস্তি দিতে পারে না। ‘উচ্চপর্যায়’ বা অন্য কিছু বলার কোনো সুযোগই নেই। এটা আইনের ভাষা হতে পারে না। যেকোনো বিষয়ে শাস্তি দিতে হলে অবশ্যই বিধি উল্লেখ করতে হবে।

অধ্যপক সৈয়দুর আরও বলেন, যেহেতু আমাদের কোনো শৃঙ্খলা বিধি নেই, সেহেতু প্রচলিত সরকারি বিধি অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিতে হবে। অথবা তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর নোটিশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে মাত্র। এ ছাড়া যেহেতু শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে, তার স্বার্থে হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দরকার ছিল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্কলার্স কাপ ২০২৪’ / শুরু হলো জমজমাট বুদ্ধির লড়াই!

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে চাকরি, পদসংখ্যা ৫৪

‘সবসময় স্বপ্ন ছিল চেন্নাইয়ের হয়ে খেলার’

কুবিতে উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা

ভিত্তিহীন মেইলে সমর্থন প্রত্যাহার / মামলায় জিতলেন লেবার পার্টির প্রার্থী নুরুল খান

চবির হলে ছাত্রলীগ কর্মীর মদপান, ছবি ভাইরাল

কুড়িগ্রামে হিটস্ট্রোকে এক নারীর মৃত্যু

গাজীপুরে বিদ্যুতের সাবস্টেশনের ট্রান্সফরমারে আগুন

বেলুন উড়িয়ে শুরু হলো জব্বারের বলী খেলা

২৮ এপ্রিল খুলছে স্কুল-কলেজ

১০

নারী শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে : জিল্লুর রহমান

১১

জিআই সনদ পেল টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্য

১২

মোনাজাতে অঝোরে চোখের পানি ফেললেন মুসল্লিরা

১৩

বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকারের চেয়ারম্যান 

১৪

সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে ১৪ বিয়ে!

১৫

জেনারেল ম্যানেজার নিচ্ছে ল্যাবএইড, ৪৫ বছরেও আবেদন

১৬

নিজের নামে ভুয়া জিমেইল, সতর্ক করলেন ঢাবি উপাচার্য

১৭

হা-মীম গ্রুপে জনবল নিয়োগ, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

১৮

স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের নবযাত্রা

১৯

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক : চরমোনাই পীর

২০
*/ ?>
X