আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ০৩:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অবহেলায় নষ্ট

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অবহেলায় নষ্ট

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রার্থীরা। করোনা মহামারি, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ধীরগতি এবং এনটিআরসিএর সঙ্গে অধিদপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি হচ্ছে না। নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেও এক বছর ধরে গণবিজ্ঞপ্তির আশায় চাকরিপ্রত্যাশীরা। অধিদপ্তরগুলো থেকে তালিকা না পাওয়ায় চলতি বছর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে প্রতিবছর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ, যোগ্য শিক্ষকদের মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করার পর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

সেখানে আবেদনের পর পুলিশি যাচাই শেষে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণসহ গণবিজ্ঞপ্তির আশায় অপেক্ষারত আগের নিবন্ধনগুলোতে উত্তীর্ণদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে এনটিআরসিএ। সবচেয়ে বেশি সময়ও ব্যয় করছে ১৬তম নিবন্ধনধারীদের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩ বছর ৫ মাস পার হলেও এখনো দেওয়া হয়নি গণবিজ্ঞপ্তি। বিভিন্ন সময়ে এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলেও তা করেনি।

২০১৯ সালের ২৩ মে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের ৩০ আগস্ট হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর। সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও এক বছর পর ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ফল প্রকাশ করা হয়। ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় মৌখিক পরীক্ষা। এটা শেষ করতে সময় লাগে ৯ মাসের বেশি।

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর ১৬তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় স্কুল-২ পর্যায়ে ৯৯৬, স্কুল পর্যায়ে ১৪ হাজার ৪৬ এবং কলেজ পর্যায়ে ৩ হাজার ৫০-সহ মোট ১ হাজার ৫৫০ প্রার্থী ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেরি হওয়ার পেছনে এনটিআরসিএর সঙ্গে অধিদপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, গত ২৬ জুন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এনটিআরসিএ। এ কার্যক্রম চলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এরপর শূন্যপদের চাহিদা এলে তা যাচাই করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগ, বিভাগ থেকে যাচাই-বাছাই শেষে অধিদপ্তর হয়ে সেগুলো যাবে অধিদপ্তরে।

এজন্য প্রথমে ৬ অক্টোবর, এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ করে এনটিআরসিএতে তালিকা পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালিকা পাঠাতে পারেনি অধিদপ্তরগুলো। শূন্যপদের এ তালিকার বেশিরভাগ মাউশির আওতাধীন বেসরকারি স্কুল-কলেজের। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই শেষে সেই তালিকা এখনো মাউশিতে এসে পৌঁছায়নি।

এ বিষয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘শূন্যপদের তথ্য যাচাইয়ে মাঠ পর্যায়ের ৯ অঞ্চলে তালিকা দিয়েছি। সেখান থেকে যাচাই হয়ে এলে আমরা এনটিআরসিএতে পাঠাব।’ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তালিকা এখনো এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়নি। তবে সেটা দ্রুতই পাঠানো হবে জানিয়ে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের যাচাই-বাছাই প্রায় শেষ। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই মাউশিতে পাঠাতে পারব।’ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যাচাই-বাছাইয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

এ অধিদপ্তরে শূন্যপদ যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি দেখেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (এমপিও) নাজমুন নাহার। এ বিষয়ে জানতে তাকে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা জানান, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেরি হওয়ায় ৪-৫ হাজার প্রার্থীর বয়স ৩৫ পার হয়ে গেছে। ফলে যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে পারবেন না। এর প্রভাব পড়বে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর।

তারা আরও জানান, নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে আবেদন করে বেশিরভাগ পদ দখল করেও পরবর্তী সময়ে ইনডেক্সধারীদের অনেকেই যোগদান না করায় সেই পদগুলো শূন্যই থাকছে। এ ছাড়া অনেক প্রার্থী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে গিয়ে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষক শূন্যতায় ফেলছেন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ক্ষতি পোষাতে ইনডেক্সধারীদের আলাদা করে নতুন প্রার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ষোড়শ নিবন্ধন উত্তীর্ণরা।

ইমরান হোসেন নামে একজন প্রার্থী কালবেলাকে বলেন, ‘গত এপ্রিলে আমাদের গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা বলেছিলেন এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান। এরপর বলেছিলেন, অক্টোবরে দেওয়া হবে। এখন বলছেন, নভেম্বরে দেবেন। কিন্তু পরিস্থিতি যা দেখছি, নভেম্বরেও হবে না। এ বছরে হবে কিনা, সেটাই সন্দেহ। নিবন্ধনের জন্য ৩২ বছর বয়সে যারা আবেদন করেছেন, তাদের বয়সসীমা শেষ। গণবিজ্ঞপ্তির জন্য কেমন ব্যাকডেট দেবে, জানি না। এনটিআরসিএ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু তারা কথা রাখতে পারছেন না।’

এমপিও নীতিমালার নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেধার ভিত্তিতে সুপারিশ করতে হবে। ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পর্যন্ত উপজেলাভিত্তিক মেধাতালিকা ছিল। এখন হবে জাতীয় মেধাতালিকা। ১-১২তম নিবন্ধনের জন্য একই পরিপত্র ছিল। ২০১৫ সালে ১৩তম নিবন্ধনের জন্য নতুন পরিপত্র জারি করে এনটিআরসিএ।

এতে উল্লেখ আছে, মেধার ভিত্তিতে উপজেলা পর্যায় থেকে যারা সর্বোচ্চ নম্বরধারী, তাদের ওই উপজেলায় নির্দিষ্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, কোনো উপজেলায় পাঁচটি পদ ফাঁকা আছে, সেখানে ৫০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অনেকে। আবার অন্য উপজেলায় একটা পদও খালি নেই, সে কারণে কেউ পদও পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই মামলা করেন। যার ভিত্তিতে তৃতীয় নিয়োগ চক্রে ২ হাজার ২০০ জন নিয়োগ পান।

‘মামলা করেই অনেকে নিয়োগ পাচ্ছেন’ দেখে পরবর্তী সময়ে অনেকেই একইভাবে মামলা করেন। তাদের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। মামলা করে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছেন দেখে পরিপত্র সংশোধনের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ২৫ অক্টোবর আরেকটি সভা হয়, সেখানেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থী এম এ আলম বলেন, ‘এবার ৭০ হাজার ৩১৭টির মতো শূন্যপদের তালিকা পাওয়া গেছে বলে জেনেছি। সবশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমরা এনটিআরসিএতে যাই। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অধিদপ্তরগুলো পদ যাচাইয়ে বিলম্ব করছে। সে কারণে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এমপিও নীতিমালার ০ নম্বর অনুচ্ছেদের সংশোধনী নিয়েও কালক্ষেপণ করা হতে পারে। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আমাদের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা হোক।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা শূন্যপদের তালিকা পেয়েছি। এ সংখ্যা ৭০ হাজারের মতো। তবে সেটা চূড়ান্ত যাচাই শেষে কিছুটা কমতেও পারে। কারণ, অনেকেই ভুল চাহিদা পাঠিয়ে এখন বাতিলের জন্য অনুরোধ করছেন। শূন্যপদের তালিকা যাচাইয়ের জন্য অধিদপ্তরগুলোতে পাঠিয়েছি। অধিদপ্তর থেকে যাচাই-বাছাই শেষে না পাঠালে আমরা তো বিজ্ঞপ্তি দিতে পারব না। আর ১৭তম নিবন্ধনে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছি। সেখান থেকে অনুমতি না পেলে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুধবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য হ্যাটট্রিক পুরস্কার পেলেন এসি পরশুরাম জোন

প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন

বুধবার বন্ধ রাজধানীর যেসব মার্কেট

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৪ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

রানা প্লাজা ধস : বিচার ও পুনর্বাসনের অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা

চবিতে নতুন ৫ জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ

পরনের কাপড় ছাড়া দরিদ্র ৫ পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই

মিষ্টি খেতে বছরজুড়ে থাকে ভিড়

১০

জ্ঞান ফেরেনি মায়ের, ছেলের কবরের পাশে পায়চারি করছেন বাবা

১১

খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

১২

এবার চিপকেও ব্যর্থ মোস্তাফিজ

১৩

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর

১৪

চাঁদপুরে টাউন হল মার্কেটে আগুন

১৫

নারী বিশ্বকাপের ভেন্যু দেখতে সিলেটে আইসিসির প্রতিনিধি দল

১৬

সুদের ওপর কর অব্যাহতি পেল অফশোর ব্যাংকিং

১৭

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বাচসাস’র নিন্দা

১৮

চবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

১৯

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

২০
*/ ?>
X