পহেলা বৈশাখের চারদিন পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাসমারোহে বর্ণিল শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়। এরপর আলোচনা সভা, লোকসংগীত, যাত্রাপালার মতো ছিল বর্ণিল অনুষ্ঠান।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে আবার জবি ক্যাম্পাসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম।
এবারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশাচিত্রকে মূল প্রতিপাদ্য করে এবং ‘বৈশাখে নূতন করিনু সৃজন/ মঙ্গলময় যত তনু-মন’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় একটি রিকশা করে নতুন বর বউয়ের যাত্রার প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়।
রিকশাচিত্রের পাশাপাশি সংকটাপন্ন প্রাণী প্রজাতির মধ্যে কুমিরের মোটিফ তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও লক্ষীপেঁচা, ফুল, মৌমাছি, পাতা, বাঘের মুখোশ এবং গ্রামবাংলার লোক কারুকলার নিদর্শনসমূহ স্থান পায়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটির আয়োজনের দায়িত্বে ছিল চারুকলা অনুষদ।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা সভায় বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া সত্ত্বেও সীমিত অবকাঠামো নিয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহৎ পরিসরে নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। সারা দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থী। আর এধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা তুলে ধরতে পারছে। পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান তারপর বাংলাদেশ এবং এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধুর এই অবদান যেন আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের চিন্তা চেতনায় ধারণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়। এইখানে যেন সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার জায়গা না হতে পারে। আমি সেই দর্শনে বিশ্বাসী, যেটা মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সংবিধানের ৪টি স্তম্ভের মাধ্যমে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই সংবিধানকে নিয়েই আমি এগিয়ে যেতে চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি। এরপরই শুরু হয় গ্রামীণ যাত্রাপালা। এতে উচ্ছ্বাস দেখা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, সংগীত বিভাগ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ, উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন।
উল্লেখ, গত ১৪ এপ্রিল সারা দেশে পালিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। রমনার বটমূলে দিনভর নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটিকে বরণ করেন নানা পেশার মানুষ।
মন্তব্য করুন