বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে তাগিদ দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে আয় দেখাতে বলা হয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সেই আয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিচ্ছু ও অধ্যয়নরতদের বিভিন্ন ফি বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি রসিদ অনুযায়ী ভর্তি, সেমিস্টার, বেতন, আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, ছাত্র-ছাত্রী কল্যাণ, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটস ফিসহ ১৫টি আয়ের খাত দেখানো হয়েছে। এতোদিন এসব খাতে শিক্ষার্থীদের গুণতে হতো ১৭ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া সেমিস্টার ফি প্রতি গুণতে হতো ৫৫০ থেকে ৪৫০০ টাকা। ২০১৯-২০ সেশনে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি ৫৫০ টাকা থাকলেও ২০২৪-২৫ সেশনে পুনরায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে ফি বাড়িয়ে করা হয় হাজার টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে অধ্যায়নরতদের সেমিস্টার ফিও বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার টাকা।
গত ১৭ অক্টোবর রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, স্নাতক প্রথম বর্ষে ফি ১ হাজার, দ্বিতীয় বর্ষে ৫৫০ টাকা ফি বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে স্নাতকোত্তরের (বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা ও আইন) অনুষদের ভর্তির ফি আগে ৭ হাজার ৮০০ থাকলেও ২০২৩-২৪ সেশনে সেই ফি ৮ হাজার ৯০০ টাকা হয়েছে, ১০০ টাকার হল ফি বাড়িয়ে ১৫০ হয়েছে। এ ছাড়া স্নাতকের নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করেই ইউজিসির স্বার্থে বেতন ও ফি বাড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকার প্রতিবছর ভর্তুকি দেয়। এর অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত পরিবারের। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবার দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি কখনোই সমাধান হতে পারে না। কর্তৃপক্ষ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে অনুদান সংগ্রহ করতে পারে। এ ছাড়া বিকল্প অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করাও প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ দপ্তরের সূত্র জানায়, ইউজিসি যে আয় ধরে দেয়, তা দেখাতে না পারলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাজেট থাকে, তা থেকে কেটে রাখা হয়। তবে অর্থ দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করে দেখার পর যদি ইউজিসি দেখে আয়ের সুযোগ নেই, তখন অর্থ কেটে রাখার প্রশ্নই আসে না।
কোষাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, শিক্ষার্থীদের ফি বাড়িয়েছে আগের প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় তারা এগুলো পাশ করিয়ে নেয়। এখন ফি কমানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।’
উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ফি বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন। এখন ফি কমানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ফি কমানো কষ্টকর। ইউজিসি বারবার তাগিদ দিচ্ছে নিজেদের কিছু আয় করার জন্য কিন্তু প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফি ছাড়া আয়ের খাত নেই বললেই চলে। তবুও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি আমি সিন্ডিকেট সভায় তুলবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কেটে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার বলেন, ‘এমন কোন নিয়ম নেই।’
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘এটা ইউজিসির বিষয় না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিষয়, তারা ভালো বলতে পারবে।’
কিন্তু ইউজিসি বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ২০০৬-২৬ সাল পর্যন্ত যে উচ্চশিক্ষার চার স্তরবিশিষ্ট কৌশলপত্র লেখা হয়। এর প্রথম পর্যায় শুরু ২০০৬-০৭ সালে। স্বল্পমেয়াদি পর্যায় ছিল ২০০৮-১৩। মধ্যমেয়াদি পর্ব ২০১৪-১৯ এবং দীর্ঘমেয়াদি পর্ব নির্ধারিত ২০২০-২৬। এতে প্রতিটি স্তরে ২৫ শতাংশ হারে শিক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে এবং ২০২৬ সাল নাগাদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যয় অভ্যন্তরীণ খাত থেকে জোগাড়ের কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন