রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, বুদ্ধিজীবিতার ভার বহন করতে বারবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বুদ্ধিজীবিতার সংজ্ঞার ভেতরেই আছে দ্রোহ, প্রতিষ্ঠানের ভুলভ্রন্তি নিয়ে কথা বলা। অথচ আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি বিক্রি হয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবিতা। যারা কখনো গণমানুষের পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি। এর বড় একটা বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি ২৪ এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান এবং তার আগে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, একটা সরকার, তিনটি টার্ম যাদের কোনো বৈধতা ছিল না। কারণ যেভাবে নির্বাচন হয়েছে তাতে এটাকে বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তারপরেও বিক্রীত বুদ্ধিজীবী সমাজ সবসময়ই এটাকে আড়াল করে গেছে। তাদের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা এক বিন্দুও পালন করেনি। তারা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তারা বিবেক বন্ধক দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বুদ্ধিজীবীরা কেউ মাথা নত করেননি। তারা জানতেন তাদের জীবন বিপন্ন; কিন্তু তারা কেউই বিক্রি হননি।
উপাচার্য আরও বলেন, এই যে বুদ্ধিজীবিতার সঙ্গে বিক্রি না হওয়ার যে ব্যাপারটা আছে এই ব্যাপারটাকে যদি জাগাতে না পারি তাহলে একটা দেশ ও জাতি বারবার বিভিন্নরকম সংকটের মধ্যে পড়ে। আজকের দিনে আমাদের শিক্ষা হওয়া উচিত বুদ্ধিজীবিতা, বুদ্ধিবৃত্তি, মুক্তচিন্তা এই সব জায়গায় গণমানুষের স্বার্থ এবং নিজের জ্ঞান ও বিবেকের উপরে কোনো শাসক শ্রেণির তাঁবেদারি স্থান পেতে পারে না। এই জায়গাটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এখন সুযোগ এসেছে, আমাদের এই সমস্ত জায়গায় মনোযোগী হতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্মৃতিচারণ করেন শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দারের স্ত্রী চম্পা সমাদ্দর। এরপর তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম সাদেকুল ইসলাম, হেরিটেজ আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা ও ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ স্মৃতিসংগ্রহশালার পক্ষ থেকে প্রভাতফেরি নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, শিক্ষক সমিতি, সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য করুন