দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও থার্টিফাস্ট নাইটকে সামনে রেখে কক্সবাজার পর্যটন জোনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা ছিনতাইকারিরা। সুযোগ বুঝে পর্যটক ও স্থানীয়দের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে আত্মগোপন করছে।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ভোরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের মাত্র ৫০০ ফুট দূরত্বে ছাতা মার্কেট এলাকায় পাঁচ পর্যটক ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি সামনে চলে আসে। ছিনতাইয়ের শিকার পাঁচ পর্যটক কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। ভোরে বাস থেকে নেমেই ছিনতাইয়ের শিকার হন তারা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা তিনজনই রোহিঙ্গা যুবক। তারা হলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হামিদ ওসমানের ছেলে নুর কামাল (১৯), কবির মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম (১৮) ও বশির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (১৭)। অন্যদেরও শনাক্ত করে শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত ডিআইজি।
শুক্রবার সকালে ছিনতাইয়ের শিকার পর্যটকরা হলেন, কুমিল্লার ২০নং সিটি ওয়ার্ড ডিসামন এলাকার মোমিন মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়া (২২), একই এলাকার সাজু মিয়ার ছেলে সায়মন (১৮), মো. ইমাম মিয়ার ছেলে সুমন (২০), সোহাগ মিয়ার ছেলে মো. হৃদয় (২০) ও ইয়াছিন (৩৩)।
ছিনতাইয়ের শিকার আসিফ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বাসে করে কুমিল্লা থেকে রওনা দিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজারে এসে বাস থেকে নামি। এরপর সৈকতের লাবনী পয়েন্টে যাই। সে সময় ৫-৬ জন অস্ত্রধারী আমাদের ঘিরে ধরে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, মুঠোফোনসহ সাথে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছিনতাইয়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্যুরিস্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনার পরপরই ট্যুরিস্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে ছিনতাইকারিদের ধরা সম্ভব হতো।
এদিকে সৈকতের ছাতা মার্কেট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পাঁচ পর্যটক সৈকতের লাবনী পয়েন্টে আসার পর ছাতা মার্কেট এলাকা দিয়ে সৈকতে যাওয়ার পথে ৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারি চক্র তাদের ঘিরে ধরে। এ সময় ছিনতাইকারিদের হাতে ছুরি, লম্বা ধারালো অস্ত্র দেখা যায়। তারা এ সময় মোবাইলসহ পর্যটকদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
ছাতা মার্কেটের এক দোকানদার ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি কিশোর ও তরুণ ছিনতাইকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা সুযোগ বুঝে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের। একই সাথে কলাতলী সড়ক ও গেস্টহাউস জোন এলাকায় ছিন্নমূল কিশোর-তরুণ অপরাধীচক্রের সদস্যরাও ছিনতাই ও প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে থাকে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অ্যাডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাত ১২টার দিকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। আটককৃত তিনজনই রোহিঙ্গা যুবক। যদিও এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এদের স্বীকারোক্তিতে বাকিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অতিরিক্ত ডিআইজি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবকরা চুরি করে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। হয়তো কক্সবাজার শহরের স্থানীয় কোনো অপরাধীচক্র এসব রোহিঙ্গা যুবকদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল অপরাধীকে মূল উৎপাটনে কাজ চলছে। অপরাধী যেই হোক সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন