নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রামে বিজয় মেলা

গয়না ও মৃৎপণ্য কিনতে তরুণীদের ভিড়

কাজীর দেউরীতে বিজয় মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি : কালবেলা
কাজীর দেউরীতে বিজয় মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি : কালবেলা

শনিবার বিকেল সোয়া ৩টা। সরকারি ছুটি হলেও খোলা রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবু চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউরীতে চলা বিজয় মেলায় উপচে পড়া ভিড়। মেলায় সব শ্রেণি-পেশার দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছে। কারও সঙ্গে এসেছেন মা, কারও সঙ্গে বাবা। কেউ এসেছেন স্বামীকে নিয়ে। দলবেঁধে এসেছেন বন্ধু-বান্ধবীরাও তবে তরুণীদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

দর্শনার্থীদের এই ভিড়ের কারণে মেলার আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের লালখান বাজার থেকে আসকার দিঘির পাড় এবং সিআরবি সড়ক ও নূর আহমেদ সড়কের আলমাস সিনেমা হল থেকে লাভ লেন পর্যন্ত এই যানজট ছড়িয়ে পড়ে এবং যানজট সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশকে।

সরেজমিনে মেলায় দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে সারি সারি স্টল বসেছে। এখানে বিক্রি হচ্ছে ব্যাগ, নারী ও শিশুদের পোশাক, স্যান্ডেল, সিরামিক, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, খেলনা, প্রসাধনী, গৃহস্থালি সামগ্রী, গয়না, শাল, কুটির সামগ্রী, ডোরম্যাট, শো-পিস, পারফিউমসহ নানা পণ্যের সমাহার।

মেলার মাঠের এক কোনে হস্তশিল্প ও কুটির সামগ্রী নিয়ে বসেছেন বিক্রেতা আবদুর রহমান। তার দোকান ঘিরে ভিড় করছেন তরুণীরা। ওখানে কথা হয় নগরের হালিশহরের নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার ফারজানার সঙ্গে। তিনি বলেন, শহরে সাধারণত এই ধরনের জিনিস কম দেখা যায়। পাওয়া গেলেও সব জায়গায় মেলে না। তাই এই মেলায় এসেছি।

একই কথা জানান নগরের অক্সিজেন এলাকার স্কুলশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তটিনী। তিনি এসেছেন বন্ধুর সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, অক্সিজেনের কিছু দোকানে হস্তশিল্পের দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে পরিমাণে কম পণ্য থাকায় পছন্দ করা যায় না। এ কারণে মেলার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম। আসলে এই লোভ সামলানো কঠিন।

হস্তশিল্প ও কুটির সামগ্রী বিক্রেতা আবদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ডোরম্যাট, কার্পেট ও ফ্লোর ওয়াইপারসহ বেশির ভাগ পণ্য আমিই তৈরি করেছি। একটি ডোরম্যাট ৩০০ ও একটি ফ্লোর ওয়াইপার ৭০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার টাকার বেচাকেনা করেন বলে জানান তিনি।

মেলায় অন্যান্য দোকানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভিড় লেগে আছে গয়না ও কসমেটিকের স্টলে। মেলার প্রধান গেট থেকে সামনে এগোতেই চোখে পড়বে বেশ কিছু স্টল। প্রথম দোকানেই দেখা মিলবে ইরানি বাহারি অলংকার আর বৈচিত্র্যময় ইরানি স্টোন সমাহার। এখানে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ক্রেতারা আসছেন, দোকানি দাম হাঁকছেন। অনেকে শাড়ি কিংবা পছন্দের ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে স্টোন কিনে নিচ্ছেন।

একটি স্টলের মালিক বলেন, এখানে হরেক রকম পাথর, মুক্তা, স্টোন বিক্রি করছি আমরা। চাইলে পাথর নিয়ে গয়না বানাতে পারেন। আবার অনেকে পাথর আগে পছন্দ করে। পরে চাইলে ওই পাথর কিংবা স্টোনের তৈরি আংটি আমাদের থেকে নিচ্ছে।

স্টোন ও গয়নার দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকায় স্টোন পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গয়নাও একই দামে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার ক্রেতাসমাগম কম। গতবারের থেকে বেচাবিক্রিও কম। এ বছর যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমনটা হয়নি।

মেলায় প্রসাধনীসামগ্রী কিনতে আসা নগরের বনানীর বাসিন্দা আসমাউল হুসনা বলেন, কসমেটিক কেনার জন্য আলাদা করে সময় বের করা খুবই কষ্টকর। তাই মেলায় কসমেটিক দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে কিনে নেব। মেলায় থাই প্যাভিলিয়নে গয়নার দোকানগুলোতে নারীদের ভিড় অন্যান্য স্টলের তুলনায় বেশি।

গৃহস্থালির প্রায় সব জিনিসপত্র এই মেলায় পাওয়া যায় বলে শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেকে এই মেলায় আসেন।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফিরোজ চৌধুরী ৪০০ টাকায় একটি জাদুর সরঞ্জাম কিনল। সে বলে, ‘আমি খুব খুশি। বাবা আমাকে জাদুর এই সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে। সহপাঠীদের এই জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেবো।’

কড়াই (ফ্রাইপ্যান), রুটি বানানোর জন্য চলন্ত ময়দার কাঠের থালা, জলচৌকি (কাঠের টুল), বটিসহ রান্নাঘরের জিনিসপত্র বিক্রির একটি স্টলের সামনেও নারীদের ভিড় দেখা যায়। ওই দোকানে হাতুড়ি, যাঁতি, দা, পাটা ও হামানদিস্তাও পাওয়া যাচ্ছিল। একটি বঁটি ২৫০-৬০০ টাকা, একটি দা ৩০০-৫০০ টাকা, একটি কড়াই ৩৫০-৬০০ টাকা, বঁটি ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা পণ্য যাচাই-বাছাই করে তারপর দামের জন্য দর কষাকষি করছিলেন।

সিরামিক স্টলের বিক্রয়কর্মী মনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। স্টলে একটি বড় থালা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, ছোট থালা ১৫০ টাকা, চামচ ৫০ টাকা এবং বড় বাটি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রামে বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছিল নগরের আউটার স্টেডিয়াম মাঠে। জেলা প্রশাসনের খেলার মাঠের মেলা না করার সিদ্ধান্তের পর সেই মাঠে আর মেলা হয়নি। তবে এ বছর বিজয় মেলার জন্য আবারও আউটার স্টেডিয়ামকে বেছে নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু পরে সেখানে না করে রেলওয়ের মালিকানাধীন সিআরবির মাঠে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৫ ডিসেম্বর মেলার স্থান আবারও পরিবর্তন করে ভেঙে ফেলা চট্টগ্রাম শিশুপার্কের মাঠে নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, একটা গেট আগে বন্ধ ছিল। তবে মূল গেটে ভিড়ের বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় এখন আরও একটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। আর যানজট নিরসনের জন্য আমরা পুলিশকে বলেছি। পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়া হয়েছে। তারা যানজট নিরসনে কাজ করছে।

বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব আহমেদ নেওয়াজ বলেন, ১৯৮৯ সালে যেখানে বিজয় মেলা শুরু হয়েছিল, এবার সেখানে বিজয় মেলা উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমে ইচ্ছায় এবারের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সরকার এ মেলা আয়োজনে আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। এটা সবার মেলা, জনগণের মেলা।

তিনি আরও বলেন, বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বই, চব্বিশে কী হয়েছিল, সেই বিষয়গুলো প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই মেলার আয়োজন। এখানে আমাদের অনেক স্মৃতি ফুটে উঠেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রামুতে হাতির আক্রমণে ব্যবসায়ী নিহত

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ছাত্র মজলিসের সভা

ময়মনসিংহে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ২৫

‘বিগত বছরগুলোতে বিক্রি হয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবিতা দেখেছি’

জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মী হত্যা, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

১৬ বছরের দুঃশাসন শেষ হতে ১৬ দিনও লাগেনি : অসীম

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের চিত্র প্রদর্শনী

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নতুন সভাপতি কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মাছুদ

রেলস্টেশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বার্তা, উত্তেজনা

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের মশাল মিছিল

১০

মঈন খানের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের

১১

চট্টগ্রামে বিজয় মেলা / গয়না ও মৃৎপণ্য কিনতে তরুণীদের ভিড়

১২

আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ভূমি দখল করেছে দাবি, জানা গেল সত্যতা

১৩

আন্দোলনে হামলায় আ.লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার  

১৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ নিলেন ডা. সায়েদুর রহমান

১৫

কুমিল্লায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আবাহনীকে হারাল মোহামেডান

১৬

চুল কাটতে বলায় মারধর, ১১ মাস অজ্ঞান থাকা সেই বৃদ্ধের মৃত্যু

১৭

‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল আ.লীগ’

১৮

দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পর দায় স্বীকার বার্সা কোচের

১৯

‘ট্যাগের রাজনীতি থেকে এখনো বের হতে পারিনি’

২০
X