শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী লীগ- একথা উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা, চেতনাকে ধূলিসাৎ করেছিল।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট মহিলা মার্কেট ‘জয়িতা’ প্রাঙ্গণে হালুয়াঘাট পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নির্লজ্জ লুটপাট, দুর্নীতি করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণ করেছিল, কর্তৃত্ববাদ ও আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ চরম বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশ পরিচালনার পরিবর্তে তারা আওয়ামী ও তাদের প্রভুর দেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, স্বাধীনতার পর আওয়ামী সরকারের বিভাজন, দমনপীড়ন ও একদলীয় শাসনের কারণে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়েছিল। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের চতনায় প্রত্যাশিত রাষ্ট্র গঠন করা যায়নি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠনে নতুন করে কাজ শুরু কারলেও দেশি বিদেশি চক্রান্তে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ও পরবর্তীতে বার বার বাধাগ্রস্ত করা হয়।
তিনি বলেন , ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর আবার সেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এবার সেই সম্ভাবনাকে কোনোভাবেই বানচাল করতে দেওয়া যাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধান উপদেষ্টা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি ও আভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় বিভিন্ন ষড়যন্ত্র অনুধাবন করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেও সরকারের মধ্যে কারো কারো ভূমিকা ও বক্তব্য জাতীয় ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা হবে আত্মহত্যার শামিল।
সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার কণ্ঠে রাজনীতি বিরোধী বক্তব্য আসছে উল্লেখ করে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দিনশেষে রাজনীতিবিদরাই দেশ চালাবে, এটাই অমোঘ সত্য। তাই রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে না বলে রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যতটুকু উন্নয়ন বা সংস্কার তা রাজনীতির হাত ধরেই এসেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্র গঠনে যে সংস্কার এনেছিলেন তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন। দেশ বিদেশে তা সমাদৃত হয়েছে। তাই ৫৪ বছরে রাজনীতিবিদরা সংস্কার করে নাই, উপদেষ্টার এই বক্তব্য শুধু অমূলকই নয়, বিরাজনীতিকরণের পদচিহ্ন বলে বিবেচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব নিশ্চয়ই বিএনপি বা দেশবাসীর ওপর চাপানো সুবিবেচনাপ্রসূত হবে না।
আলোচনা সভার পর ৪ শতাধিক দুস্থ নারী পুরুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এমরান সালেহ প্রিন্স শীতার্ত মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন।
হালুয়াঘাট পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আল আমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, হালুয়াঘট পেশাজীবী পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি মো. মাসুদ করিম , সহসভাপতি কামাল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আসলাম মিয়া বাবুল, আবু হাসনাত বদরুল কবির, আলী আশরাফ, আলমগীর আলম বিপ্লব, বিএনপি নেতা অধ্যাপক মেহেবুবুর রহমান মুকুল, আব্দুল হাই, কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ, শফিকুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি আবদুল আজিজ খান, তারিকুল ইসলাম চঞ্চল, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা নীলু, জেলা ছাত্র দলের সিনিয়র সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান আসিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন খান, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মশিউজ্জামান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলিমুল ইসলাম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান দুলাল, উপজেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক আকিকুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাইমুর আরেফীন পাপন, পৌর ছাত্র দলের আহ্বায়ক নূরে আলম জনি, সদস্য সচিব তাজবীর হোসেন অন্তর প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন ।
এর আগে হালুয়াঘাট উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপজেলার গাঙিনা পাড়ে বধ্যভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও মুনাজাত করেন।
মন্তব্য করুন