শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ছয় মাসেও গঠন হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যান

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাস্টারের মৃত্যুর ছয় মাস পেরুলেও এখন পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে কেউ দায়িত্বে না থাকায় চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন বা এ ধরনের সনদ সংগ্রহ করতে ইউনিয়নের অন্তত ত্রিশ হাজার নাগরিক দৈনন্দিন সীমাহীন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিন ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের গত ১৭ মে চর লরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাস্টার দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর দুদিন পর ১৯ মে ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হলেও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কাউকেই প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়নি।

ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চরলরেন্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ছয় মাস আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। আজও ইউনিয়নটিতে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়নি। লোকজন জরুরি প্রয়োজনে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে মাসের পর মাস হন্ন হয়ে ঘোরাঘুরি করছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পরিষদের একজন সদস্য জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাস্টার মৃত্যুর আগে ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুল খালেককে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করে একটি রেজুলেশন তৈরি করেন। ওই রেজুলেশনে সদস্যরা স্বাক্ষরও করেন। এরপর কয়েকজন সদস্যসহ ১নং ওয়ার্ড সদস্য নিজাম উদ্দিন নিজেকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ রেষারেষি করে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যে কারণে কেউই প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাননি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, দুজন সদস্যের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ের কারণে ইউনিয়নের কয়েক হাজার সেবাপ্রত্যাশীরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। এতে উপজেলা প্রশাসনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে, প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় কার্যত পরিষদটিও অচল হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি একখণ্ড জমি বিক্রি করেছেন। বিক্রিত জমিটি রেজিস্ট্রেশন দিতে ওয়ারিশ সনদের প্রয়োজন হওয়ায় এযাবৎ ৬ দিন তিনি পরিষদ কার্যালয়ে গিয়েছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের দায়িত্বে কেউ না থাকায় ওয়ারিশ সনদে সই করাতে পারছেন না। এই ‘স্বাক্ষরের’ জন্য আর কত দিন এভাবে ঘুরতে হবে।

একইভাবে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রেদওয়ান হোসেন জানান, পরিবারের অভাব গোছাতে প্রবাসে যেতে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তিনি। কিন্তু মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলবশত বয়স কম হওয়ার কারণে চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র দরকার। এ পর্যন্ত বহুবার পরিষদে গিয়েছেন শুধু চেয়ারম্যানের ‘সাক্ষরের’ জন্য প্রত্যয়ন নিতে পারিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফিরোজ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান না থাকার কারণে আমরা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। লোকজনকে জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও মৃত্যু সনদের জন্য এসে ফেরত যেতে হচ্ছে।

ইউনিয়নের বাসিন্দা ও চর সীতা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ছিদ্দিক জানান, চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার আগেও আমরা বিভিন্ন ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন মারা যাওয়ার পর সে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।

এবিষয়ে ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আবু বকর ছিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসা নারী-পুরুষরা পরিষদের কার্যালয়ে এসে ভিড় জমান। চেয়ারম্যানের জন্য দিনের পর দিন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে মানুষ। লোকজন আমাদেরকে গালমন্দ করে। এতে আমরা লজ্জিত ও চরম অসহায়ত্ববোধ করি।

তিনি আরও বলেন, অনেক ইউনিয়নে চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে থাকার কারণে তাদের জায়গায় প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান মৃত্যুবরণ করেছেন ছয় মাস, এখনও প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করা হয়নি। বর্তমানে পরিষদের চেয়ারম্যানও নাই, প্যানেল চেয়ারম্যানও নাই। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষেরও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেই।

এবিষয়ে ইউপি সদস্য আবদুল খালেক জানান, উচ্চ আদালত তাকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করেছেন। রায়ের কপি হাতে পেতে কিছুদিন সময় লাগবে।

অন্যদিকে নিজাম উদ্দিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

লরেন্স ইউপি কার্যালয়ের সচিব সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের মৃত্যুর পর থেকে কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেননি। সেবাপ্রার্থীরা সেবা নিতে না পারায় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস কালবেলাকে জানান, ওই ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স থেকে ইয়াবা উদ্ধার 

বিটিএস ‘আসক্তিতে’ ২ মাদ্রাসাছাত্রী নিখোঁজ

শেখ হাসিনার জনসভার দাবি করা ভিডিওর সত্যতা জানা গেল

‘শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে’

উত্তরখানে যৌথ অভিযানে চোলাই মদসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

‘আ.লীগ ফিরে আসবে’ মন্তব্য করা সেই ইউএনও হলেন এডিসি

ধানের বস্তার নিচে লুকানো ৪০ কেজি গাঁজা জব্দ, গ্রেপ্তার ১

খুবিতে ১৫তম জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মিরপুরে রোড ক্রসিংয়ে রং দিয়েছে ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদল

ক্ষমতাসীন কেউই দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দিতে পারেনি : ফয়জুল করিম

১০

তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ অপেক্ষমাণ : কায়াস মাহমুদ

১১

চুয়াডাঙ্গার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাখাওয়াত গ্রেপ্তার

১২

চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ছয় মাসেও গঠন হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যান

১৩

রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে উপদেষ্টাদের : ভিপি নুর

১৪

ঢাকায় শুরু হলো ‘অ্যাম্বাসি ফুটবল ফেস্ট ২০২৪’

১৫

‘আগামীর বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত’

১৬

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে শনিবার

১৭

চেয়ারম্যান কারাগারে, ইট নিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা

১৮

দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে কল্যাণ ফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশ

১৯

তাপমাত্রা নিয়ে খারাপ খবর দিল আবহাওয়া অফিস 

২০
X